বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
পবিত্রতা (ওযূ ও তায়াম্মুম)
(৩৩) তায়াম্মুমের সময় দুইবার হাত মারা ও কনুই পর্যমাসাহ করা :
তায়াম্মুম
করার সময় একবার মাটিতে হাত মারতে হবে অতঃপর মুখমল এবং দুই হাত কজি পর্যড় মাসাহ
করতে হবে।
দুইবার হাত মারা ও কনুই পর্যড় মাসাহ করা সম্পর্কে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তা ত্রুটিপূর্ণ। যেমন
(ক) ইবনু ওমর (রাঃ)
রাসূল (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন,
তায়াম্মুমে দুইবার হাত
মারবে। মুখের জন্য একবার আর দুই হাত কনুই পর্য মাসাহ করার জন্য একবার।
তাহক্বীকৃ :
হাদীছটি
যঈফ। এর সনদে কয়েকজন ত্রুটিপূর্ণ রাবী আছে। আবদুল্লাহ ইবনু ওমর আল-উমরা নামক
রাবীর স্মৃতিশক্তি দুর্বল হিসাবে যঈফ।
আলী ইবনু যাবইয়ান নামক রাবী অতান্ত দুর্বল। ইমাম ইবনু মাঈন বলেন, সে মিথুক, অপবিত্র। ইমাম বুখারী বলেন, সে মুনকার হাদীছ বর্ণনাকারী। ইমাম নাসাঈ বলেন, সে হাদীছের পরিত্যক্ত রাবী।
প্রশ্ন হল, উক্ত হাদীছ হেদায়া ও কুদূরীতে কিভাবে স্থান পেল? আর ছহীহ বুখারী ও মুসলিমে তায়াম্মুম করার পদ্ধতি সম্পর্কে যে সমস্ত ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে সেগুলো কেন প্রত্যাখ্যান করা হল?
(খ) নাফে বলেন, আমি একদা আবদুল্লাহ বিন
ওমর (রাঃ)-এর সাথে তার এক কাজে গিয়েছিলাম।
অতঃপর তিনি তার কাজ সমাধা করলেন। সেই
দিন তার কথার মধ্যে এই কথা ছিল যে, কোন এক ব্যক্তি এক গলিতে চলছিল।
এমন সময় রাসূল
(সা.)-এর সাক্ষাৎ পেল। তিনি তখন পায়খানা বা পেশাবখানা থেকে বের হয়েছেন।
সে রাসূল
(সা.)-কে সালাম দিল কিন্তু তিনি তার উত্তর নিলেন না। এমনকি যখন গলির মধ্যে
অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছিলেন।
তখন তিনি দুই হাত দেওয়ালের উপর মারলেন এবং উহা দ্বারা
মুখমল মাসাহ করলেন। অতঃপর পুনরায় হাত মারলেন এবং দুই হাত মাসাহ করলেন।
তারপর লোকটির সালামের উত্তর দিলেন আর বললেন, আমি ওযূ অবস্থায় ছিলাম না। উহাই তোমরা সালামের উত্তর দিতে আমাকে বাধা দিয়েছিল।
তাহক্বীকৃ :
হাদীছটি যঈফ। ইমাম আবুদাউদ বলেন, “আমি ইমাম আহমাদ বিন হাম্বলকে বলতে শুনেছি, মুহাম্মাদ বিন ছাবিত তায়াম্মুম সম্পর্কে একটি মুনকার হাদীছ বর্ণনা করেছে।
ইমাম বুখারী এবং ইয়াহইয়া
ইবনু মাঈনও অনুরূপ বলেছেন। ইবনু হাজার আসক্বালানী তাকে যঈফ বলেছেন। ইমাম খাত্তাবী
বলেন, হাদীটি ছহীহ নয়।
কারণ
মুহাম্মাদ ইবনু ছাবিত আল-আবদী অত্যড় দুর্বল। তার হাদীছ দ্বারা দলীল গ্রহণ করা হয়
না।
ইমাম আবুদাউদ আরো বলেন, মুহাম্মাদ ইবনু ছাবিত রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর দুইবার হাত মারা ও ইবনু ওমরের কাজের যে বর্ণনা করেছে, এই ঘটনার ব্যাপারে সে নির্ভরযোগ্য নয়।
২২০. মিছবাহুয যুজাজাহ ১/৮৫ পৃঃ।।
২২১. বায়হাক্বী হা/১০৫৪, ১/২০৭; হাকেম হা/৬৩৪ ও ৬৩৬; আবুদাউদ হা/৩৩০, ১/৪৭ | পৃঃ; দারাকুত্নী ১/১৭৭; বুলুগুল মারাম হা/১২৮; বিচ্ছুরিত দ্রঃ তানক্বীহ, পৃঃ
১৯৪-১৯৭।
২২২, সিলসিলা যঈফাহ হা/৩৪২৭; যঈফুল জামে' হা/২৫১৯; যঈফ আবুদাউদ
হা/৩৩০।
২২৩. হেদায়া ১ম খ-, পৃঃ ৫০, ‘তায়াম্মুম’ অনুচ্ছেদ; কুদূরী, পৃঃ ১২।
২২৪. ছহীহ বুখারী হা/৩৩৮, ১/৪৮ পৃঃ, (ইফাবা হা/৩৩১, ১/১৮৮ পৃঃ), ‘তায়াম্মুম’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৪; মুসলিম হা/৮৪৬, ১/১৬১ পৃঃ; মিশকাত হা/৫২৮, পৃঃ ৫৪; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৪৯৩, ২/১৩৫ পৃঃ।
তায়াম্মুমের সঠিক পদ্ধতি :
মুসুল্লি পবিত্র হওয়ার নিয়ত করে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে মাটিতে দুই হাত একবার মারবে। অতঃপর ফুক দিয়ে ঝেড়ে ফেলে প্রথমে মুখমল তারপর দুই হাত একবার কজি পযন্ত মাসাহ করবে।
যেমন রাসূল (সা.) বলেন,‘তোমরা জন্য এইরূপ করাই যথেষ্ট ছিল। এই বলে তিনি তাঁর
দুই হাত মাটির উপর মারলেন এবং ফুক দিলেন।
অতঃপর দুই হাত দ্বারা মুখমল ও দুই হাতের কজি পযন্ত মাসাহ করলেন।
জ্ঞাতব্য :
আবুদাউদে
দুইবার হাত মারা ও পুরো হাত বগল পর্যড় মাসাহ করা সংক্রান্ত যে হাদীছ বর্ণিত
হয়েছে,
তার সনদ বিশুদ্ধ হলেও সেগুলো মূলতঃ কতিপয় ছাহাবীর ঘটনা মাত্র, যা রাসূল (ছাঃ) তাদেরকে শিক্ষা দেওয়ার আগে ঘটেছিল।
অতঃপর রাসূল (সা.) তায়াম্মুমের উক্ত পদ্ধতি শিক্ষা দেন।
যেমন- ইমাম মুহিউস সুন্নাহ বলেন,
এটা
ছাহাবীদের কাজের ঘটনা,
যা আমরা রাসূল (সা.)
থেকে নকল করতে পারিনি। যেমনটি আম্মার (রাঃ) জুনবী অবস্থায় মাটিতে গড়াগড়ি করার
ঘটনা নিজের পক্ষ থেকে বর্ণনা করেছেন।
অতঃপর যখন তিনি রাসূল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, তখন তিনি শুধু মুখমল ও
দুই কজি মাসাহ্র নির্দেশ দান করেন।
এ পর্যই শেষ করেছেন। আর আম্মার (রাঃ) তার কাজ
থেকে ফিরে আসেন।শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন,‘কিন্তু আমল এর উপর (দুই হাত মারা) ছিল না।
কারণ তখন ছাহাবীগণ রাসূল (সা.)-এর শিক্ষা অনুযায়ী করেননি। বরং আমল ছিল শেষ হাদীছের প্রতি, যা পরেই আসছে। অতএব রাসূলুল্লাহ (সা.)এর আমল ও বক্তব্যই উম্মতের জন্য অনুসরণীয়।
২২৫. আবুদাউদ হা/৩৩০, ১/৪৭ পৃঃ; মিশকাত হা/৪৬৬; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৪৩৭, ২/১০৯ পৃঃ, ‘অপবিত্র ব্যক্তির সাথে মিলামেশা’ অনুচ্ছেদ।
২২৬. যঈফ আবুদাউদ হা/৩৩০।
২২৭. যঈফ আবুদাউদ (আল-উম্ম) হা/৫৮, পৃঃ ১৩৬।
২২৮. -যঈফ আবুদাউদ হা/৩৩০।
২২৯. মুত্তাফাক্ব আলাইহ; ছহীহ বুখারী হা/১; মিশকাত হা/১; ছহীহ তিরমিযী হা/২৫, ১/১৩ পৃঃ; ছহীহ ইবনু মাজাহ হা/৩৯৭, পৃঃ ৩২ সনদ হাসান; মিশকাত হা/৪০২।
২৩০. ছহীহ বুখারী হা/৩৩৮, ১/৪৮ পৃঃ, (ইফাবা হা/৩৩১, ১/১৮৮ পৃঃ), ‘তায়াম্মুম’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৪; মুসলিম হা/৮৪৬, ১/১৬১ পৃঃ; মিশকাত হা/৫২৮, পৃঃ ৫৪; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৪৯৩, ২/১৩৫ পৃঃ।।
পাঠকের সুবিধাথে অল্প কিছু লেখা দিয়েছি। তাতে আপনাদের পড়তে সুবিধা হবে।
চলবে...........
Post a Comment