বিসমিল্লাহির রহমানির
রহিম
পবিত্রতা (ওযূ ও তায়াম্মুম)
(৫) মাথায় টুপি দিয়ে বা মাথা ঢেকে টয়লেটে যাওয়া :
৮১. আবুবকর আহমাদ ইবনু আমর আল-বাছরী আল-বাযযার, মুসনাদুল বাযযার হা/৬০৩, ১/১২১ পৃঃ; সনদ জাইয়িদ, সিলসিলা ছহীহাহ হা/১২১৩, ৩/২৮৭ পৃঃ ।
পেশাব-পায়খানায় যাওয়ার সময় মাথায় টুপি দেওয়া বা মাথা ঢেকে যাওয়ার প্রথা সমাজে লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু এর শারঈ কোন ভিত্তি নেই। উক্ত মর্মে যে হাদীছটি বর্ণিত হয়েছে তা জাল।।
আয়েশা
(রাঃ) থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.)যখন
পায়খানায় প্রবেশ করতেন,
তখন তার মাথা ঢেকে
নিতেন এবং যখন স্ত্রী সহবাস করতেন, তখনও মাথা ঢাকতেন।
তাহক্বীকৃ :
হাদীছটি জাল। এর সনদে মুহাম্মাদ ইবনু ইউনুস আল-কাদীমী নামক রাবী রয়েছে। সে এই হাদীছ জাল করেছে।
এছাড়া তার শিক্ষক আলী ইবনু হাইয়ান আল-মাখযুমীকে ইবনু হাজার আসক্বালানী
মাতরূক বলেছেন। এছাড়া অন্যান্য মুহাদ্দিছও এই হাদীছকে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
(৬) পানি থাকা সত্ত্বেও কুলুখ নেওয়া অথবা কুলুখ নেওয়ার পর পুনরায় পানি নিয়ে ইজ্ঞিা করা :
পানি থাকা অবস্থায় কুলুখ নেওয়া শরীআত সম্মত নয়। পানি না পাওয়া গেলে কুলুখ নেওয়া যাবে।
তবে পুনরায় পানি ব্যবহার করতে হবে না। কুলুখ নেওয়ার পর পানি নেওয়া
সম্পর্কে যে হাদীছ বর্ণনা করা হয় তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।
ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, নিম্নোক্ত আয়াত কুবাবাসীদের সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। এতে এমন কতিপয় লোক রয়েছে, যারা উত্তমরূপে পবিত্র হওয়াকে ভালবাসে।
আর আল্লাহ উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জনকারীকে ভালবাসেন (তওবা ১০৮)।
অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.)তাদেরকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তারা বলেছিল, (আমরা ইঙ্খিা করার সময়)
ঢিল নেওয়ার পর পানি নিই।
তাহক্বীকৃ :
বর্ণনাটি
জাল বা মিথ্যা। এই বর্ণনার কোন ভিত্তি পাওয়া যায় না। ইমাম বাযযার এটি বর্ণনা করে
বলেন, যুহরী থেকে মুহাম্মাদ
বিন আব্দুল আযীয ছাড়া অন্য কেউ একে বর্ণনা করেছেন বলে আমার জানা নেই।
৮২.
বায়হাক্বী,
আস-সুনানুল কুবরা
হা/৪৬৪।
৮৩.
সিলসিলা যঈফাহ হা/৪১৯২।
৮৪.
সিলসিলা যঈফাহ হা/১০৩১-এর ভাষ্য দ্রঃ।
আর
সে তার পিতা থেকে বর্ণনা করেছে। ইবনু হাজার আসকালানী (৭৭৩৮৫২ হিঃ) বলেন, ।
মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুল আযীয়কে আবু হাতেম যঈফ বলেছেন। তিনি আরো বলেন, তার ও তার দুই ভাই
ইমরান ও আব্দুলণ্টাই কারো একটি হাদীছও সঠিক নয়। তাছাড়া আব্দুলণ্টাহ ইবনু শাবীবও
দুর্বল।
উক্ত বর্ণনার বিরোধী ছহীহ হাদীছ :
৮৫.
তালখীছ, পৃঃ ৪১, | দ্রঃ ইরওয়াউল গালীল
হা/৪২, ১/৮২ পৃঃ।
৮৬.
ইবনু হাজার আল-আসক্বালানী,
তালখীছুল হাবীর ফী
আহাদীছির রাফইল কাবীর হা/১৫১; দ্রঃ ইরওয়াউল গালীল হা/৪২, ১/৮২ পৃঃ।
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.)বলেন, এই আয়াতটি কুবাবাসীদের সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে।
এতে এমন কতিপয় লোক
রয়েছে, যারা উত্তমরূপে পবিত্র
হওয়াকে ভালবাসে’
(তওবা ১০৮)। তিনি বলেন, তারা পানি দ্বারা
ইঞ্জিা করত। অন্য হাদীছে এসেছে,
আবু আইয়ুব আনছারী, জাবের ইবনু আব্দিলশ্লাহ ও আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, নিশ্চয়ই এই আয়াত যখন অবতীর্ণ হয়- ‘তথায় (কুবায়) এমন কতিপয় লোক রয়েছে, যারা পবিত্রতা লাভ করাকে ভালবাসে এবং আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালবাসেন তখন রাসূলুল্লাহ (সা.)বললেন, হে আনছারগণ!
এই আয়াত দ্বারা আল্লাহ তাআলা তোমাদের পবিত্রতার প্রশংসা করেছেন। তোমরা কিভাবে পবিত্রতা অর্জন কর? তারা বলল, আমরা সালাতের জন্য ওযূ করে থাকি, অপবিত্রতা হতে গোসল করে থাকি এবং পানি দ্বারা ইজ্জিা করে থাকি।
রাসূলুল্লাহ
(সা.)বলেন,
এটাই তার কারণ। সুতরাং তোমরা
সর্বদা এটা করতে থাকবে।
মূল
কথা হল, অন্যান্য অঞ্চলের
অধিবাসীরা শুধু ঢিল দ্বারা ইঞ্জিা করত। কিন্তু কুবাবাসীরা অন্যদের তুলনায় শুধু
পানি দিয়ে ইঞ্জিা করতেন। সে জন্যই আল্লাহ তাদের প্রশংসা করেছেন।
৮৭.
আবুদাউদ হা/৪৪,
১/৭ পৃঃ, পবিত্রতা অধ্যায়-১, অনুচ্ছেদ-২৩, সনদ ছহীহ;
মুদরাক
হাকেম হা/৬৭৩।
৮৮.
ছহীহ ইবনে মাজাহ হা/৩৫৫,
পৃঃ ২৯-এর শেষ হাদীছ, সনদ ছহীহ; মিশকাত
হা/৩৬৯, পৃঃ ৪৪; বঙ্গানুবাদ মিশকাত
হা/৪৪১,
‘পেশাব-পায়খানার
শিষ্টাচার অনুচ্ছেদ;
আলোচনা দ্রঃ সিলসিলা
যঈফাহ হা/১০৩১,
৩/১১৩ পৃঃ।।
আরেকটি জাল হাদীছ :
আয়েশা
(রাঃ) বলেন,
তোমরা তোমাদের
স্বামীদেরকে বলে দাও,
তারা যেন
পেশাব-পায়খানার সময় ঢিল নেওয়ার পর পানি ব্যবহার করে। আমি তাদেরকে বলতে লজ্জাবোধ করছি। কারণ রাসূলুল্লাহ(সা.)এটা
করেন।
তাহক্বীকৃ :
বর্ণনাটি
জাল। এ শব্দে কোন বর্ণনা নেই। শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন, এর কোন ভিত্তি নেই।
উক্ত বর্ণনার বিরোধী সরাসরি ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। যেখানে কুলুখ নেওয়ার কথা
নেই; বরং শুধু পানি নেওয়ার
কথা রয়েছে। যেমন
৮৯.
ইরওয়াউল গালীল হা/৪২।।
৯০.
ইরওয়াউল গালীল ১/৮২ পৃঃ।
আয়েশা
(রাঃ) বলেন,
তোমরা তোমাদের স্বামীদের বলে দাও, তারা যেন পানি দ্বারা
পবিত্রতা হাছিল করে। কারণ আমি তাদেরকে বলতে লজ্জাবোধ করছি। নিশ্চয়ই রাসূলুল্লাহ
(সা.)তা করে থাকেন।
অতএব
সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত উক্ত মিথ্যা প্রথাকে অবশ্যই উচ্ছেদ করতে হবে। পানি থাকা
সত্ত্বেও যেন কোন স্থানে কুলুখের স্তূপ সৃষ্টি না হয়। কারণ প্রকৃত ফযীলত পানি
দ্বারা ইঙ্খিা করার মধ্যেই রয়েছে।
(৭) কুলুখ নিয়ে হাঁটাহাঁটি করা :
কুলুখ নিয়ে চল্লিশ কদম হাঁটা, কাশি দেওয়া, নাচানাচি করা, দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকা, টয়লেটে কুলুখের আবর্জনার স্তুপ তৈরি করা সবই নব্য মূর্খতা।
ইসলামে এরূপ বেহায়াপনার কোন স্থান নেই। মিথ্যা ফযীলতের ধোকা মানুষকে এত নীচে নামিয়েছে। উলেশ্লখ্য যে, পুরষদের চেয়ে।
মহিলাদের পেশাবে অপবিত্রতার মাত্রা বেশী। অথচ তাদের ব্যাপারে এ ধরনের চরম ফৎওয়া দেয়া হয় না। অনুরূপভাবে একই ব্যক্তি যখন টয়লেট থেকে বের হয় তখন কিন্তু হাঁটাহাঁটি করে না, কুলুখও ধরে না।
এগুলো তামাশা মাত্র। এই অভ্যাস ইসলামের বিশ্বজনীন মর্যাদাকে চরমভাবে ক্ষুন্ন করেছে। ইসলাম সৌন্দর্যমতি জীবন বিধান।
যাবতীয় নোংরামি এখানে নিষিদ্ধ। শরীআতে পেশাব থেকে সাবধানতা অবলম্বনের কথা বলা হয়েছে। তাই বলে এর নামে নতুন আরেকটি বিদ'আত তৈরি করার অনুমতি দেওয়া হয়নি।
পেশাবের ছিটা কাপড়ে লেগে যাওয়ার আশংকায় ইসলাম তার জন্য সুন্দর বিধান দিয়েছে। আর তা হল, ওযু করার পর হাতে পানি নিয়ে লজ্জাস্থান বরাবর ছিটিয়ে দেওয়া। যেমন
রাসূলুলশ্লাহ
(ছাঃ) যখন পেশাব করতেন,
তখন ওযূ করতেন এবং পানি
ছিটিয়ে দিতেন। অতএব প্রচলিত বেহায়াপনার আশ্রয় নেওয়ার কোন প্রয়োজন নেই।
নারী-পুরুষ সকলকে এ ব্যাপারে সাবধান ও সতর্ক থাকতে হবে।
৯১.
ছহীহ তিরমিযী হা/১৯,
১/১১ পৃঃ; ছহীহ নাসাঈ হা/৪৬, ১/৮ পৃঃ।।
৯২.
আবুদাউদ হা/৩৭৬,
১/৫৪ পৃঃ; সনদ ছহীহ, মিশকাত হা/৫০২, পৃঃ ৫২; বঙ্গানুবাদ
মিশকাত
হা/৪৬৮, ২/১২৫ পৃঃ, ‘পবিত্র’ অধ্যায়, ‘অপবিত্রতা হতে
পবিত্রকরণ
অনুচ্ছেদ-বুখারী
হা/২২২ ও ২২৩।
৯৩.
ছহীহ আবুদাউদ হা/১৬৬ ও ৬৭,
১/২২ পৃঃ; মুসনাদে আহমাদ হা/১৭৫১৫; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৮৪১; মিশকাত হা/৩৬৬ পৃঃ ৪৩; বঙ্গানুবাদ মিশকাত
হা/৩৩৮,
পাঠকের সুবিধাথে অল্প
কিছু লেখা দিয়েছি। তাতে আপনাদের পড়তে সুবিধা হবে।
চলবে...........
إرسال تعليق