বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
পবিত্রতা (ওযূ ও তায়াম্মুম)
(২৫) ওযুর পরে সূরা ক্বদর পড়া :
ওযুর পর সূরা ক্বদর পড়া যাবে না। উক্ত মর্মে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তা জাল।
আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি তার ওযূর পর ‘ইন্না আনযালনা-হু ফী লায়লাতিল ক্বাদরি’ অর্থাৎ সূরা ক্বদর একবার পাঠ করবে সে সত্যবাদীদের অর্ভুক্ত হবে, যে দুই বার পাঠ করবে তার নাম শহীদদের দফতরে লিখা হবে এবং যে ব্যক্তি তিনবার পাঠ করবে আল্লাহ তাকে নবীদের সাথে হাশর-নাশর করাবেন।
তাহক্বীকৃ :
বর্ণনাটি জাল। এর কোন সনদই নেই। উল্লেখ্য যে, আশরাফ আলী থানবী তার বইয়ে সূরা
কদর পড়ার কথা বলেছেন এবং ওযূর পরের দু'আর সাথে অনেকগুলো নতুন শব্দ যোগ করেছেন যা হাদীছের গ্রন্থ সমূহে
পাওয়া যায় না। অতএব সাবধান!
ওযূ করার পর শুধু নিম্নের দু'আ পাঠ করতে হবে, যা ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত।
উচ্চারণ :
১৬১. -আলবানী,ইরওয়াউল গালীল হা/৯৬-এর আলোচনা দ্রঃ, ১/১৩৫ পৃঃ।
১৬২. দায়লামী, মুসনাদুল ফেরদাউস; সুয়ূত্বী, আল-হাবী লিল ফাতাওয়া ২/১১ পৃঃ।
১৬৩. সিলসিলা যঈফাহ হা/১৪৪৯ ও ১৫২৭।
১৬৪. পূর্ণাঙ্গ নামায, পৃঃ ৪৫।
১৬৫. ছহীহ মুসলিম হা/৫৭৬, ১/১২২ পৃঃ, (ইফাবা হা/৪৪৪), “পবিত্রতা অধ্যায়,
অনুচ্ছেদ-৬; মিশকাত হা/২৮৯, পৃঃ ৩৯, ‘পবিত্রতা' অধ্যায়; ছহীহ তিরমিযী হা/৫৫, ১/১৮ পৃঃ সনদ ছহীহ, মিশকাত হা/২৮৯, পৃঃ ৩৯; ইরওয়া হা/৯৬, সনদ ছহীহ।।
(২৬) রক্ত বের হলে ওযূ ভেঙ্গে যায় :
শরীর থেকে রক্ত প্রবাহিত হওয়া ওযু ভঙ্গের কারণ নয়। রক্ত বের হলে ওযু করতে হবে মর্মে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তা যঈফ।।
ওমর ইবনু আব্দুল আযীয তামীম দারী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (সা.) বলেন, প্রত্যেক প্রবহমান রক্তের কারণেই ওযূ করতে হবে।
তাহক্বীকৃ :
হাদীছটি যঈফ। ইমাম দারাকুত্নী (রহঃ) বলেন, ওমর ইবনু আব্দুল আযীয তামীম দারীর নিকট থেকে শুনেননি। আর ইয়াযীদ ইবনু খালেদ ও ইয়াযীদ ইবনু মুহাম্মাদ দুইজনই অপরিচিত।
তাছাড়া রক্ত বের হওয়া অবস্থায় ছাহাবায়ে কেরাম সালাত আদায় করতেন। তারা ওযূ করতেন না মর্মে ছহীহ আছার বর্ণিত হয়েছে। যেমন
বাকর
(রহঃ) হতে বর্ণিত,
তিনি বলেন, আমি ইবনু ওমর (রাঃ)-কে
দেখেছি, তিনি তার মুখমলে উঠা
ফোড়ায় চাপ দিলেন ফলে কিছু রক্ত বের হল।
তখন তিনি আঙ্গুল দ্বারা ঘষে দিলেন। অতঃপর সালাত আদায় করলেন। কিন্তু ওযূ করেননি।
শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন, রক্ত বের হলে ওযূ করা ওয়াজিব হবে মর্মে কোন ছহীহ হাদীছ নেই। তা কম হোক বা বেশী হোক।
১৬৬. ছহীহ মুসলিম হা/৪৭৬, ১/১২২ পৃঃ; মিশকাত হা/২৮৯।
(২৭) বমি হলে ওযু ভেঙ্গে যায় :
ওযু ভঙ্গের কারণ হিসাবে বিভিন্ন গ্রন্থে বমিকে উল্লেখ করা হয়েছে। আর মানুষও তাই আমল করে থাকে। অথচ তার পক্ষে কোন ছহীহ হাদীছ নেই ।
(ক) আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, সালাতের মধ্যে করো যদি বমি হয় অথবা নাক থেকে রক্ত ঝরে বা মুখ দিয়ে খাদ্যদ্রব্য বের হয় কিংবা মযী নির্গত হয়, তাহলে সে যেন ফিরে যায় এবং ওযূ করে। এরপর পূর্ববর্তী সালাতের উপর ভিত্তি করে সালাত আদায় করে। আর এই সময়ে সে কোন কথা বলবে না।
তাহক্বীকৃ :
বর্ণনাটি যঈফ। উক্ত হাদীছের সনদে ইসমাঈল ইবনু আইয়াশ নামে একজন রাবী আছে, সে যঈফ। সে হিজাযের দুই ব্যক্তি থেকে বর্ণনা করেছে। কিন্তু তারাও যঈফ।
(খ) যায়েদ ইবনু আলী তার পিতার সূত্রে তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, বমি অপবিত্র।
তাহক্বীকৃ :
বর্ণনাটি নিতান্ত যঈফ। ইমাম দারাকুত্নী হাদীছটি বর্ণনা করে বলেন, এর সনদে সাওর নামক রাবী রয়েছে। সে যায়েদ বা অন্য করো নিকট থেকে বর্ণনা করেনি। অতএব বমি হলে ওযু করতে হবে মর্মে কোন ছহীহ বিধান নেই।
জ্ঞাতব্য :
হেদায়া
ও কুদূরীতে রক্ত বের হওয়া ও বমি হওয়াকে ওযু ভঙ্গের কারণ হিসাবে উল্লেখ করা
হয়েছে। আর সে কারণেই এই আমল চালু আছে।
দুঃখজনক হল, ইমাম দারাকুত্রীর উক্ত মদ্য্য থাকতে হেদায়া ও
কুদূরীতে কিভাবে তা পেশ করা হল?
১৬৭. দারাকুত্নী ১/১৫৭; সিলসিলা যঈফাহ হা/৪৭০; মিশকাত হা/৩৩৩; বঙ্গানুবাদ
মিশকাত হা/৩০৭, ২/৫৭।
১৬৮. সিলসিলা যঈফাহ হা/৪৭০।
১৬৯. দারাকুত্নী ১/১৫৭ পৃঃ; মিশকাত হা/৩৩৩ –
১৭০. আবুদাউদ হা/১৯৮, ১/২৬ পৃঃ, সনদ হাসান, পবিত্রতা অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৭৯।
১৭১. মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/১৪৬৯, সনদ ছহীহ; আলবানী, সিলসিলা যঈফাহ
হা/৪৭০-এর আলোচনা দ্রঃ, ১/৬৮৩ পৃঃ- + 2
১৭২. ২ ১ ১ ১৪U - ১৬ ১৭ ১৮-আলবানী, মিশকাত | হা/৩৩৩-এর টীকা দ্রঃ ১/১০৮ পৃঃ।
পাঠকের সুবিধাথে অল্প কিছু লেখা দিয়েছি। তাতে আপনাদের পড়তে সুবিধা হবে।
চলবে...........
Post a Comment