বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম

মসজিদ সমূহ

 

(৩) কবরস্থানে মসজিদ তৈরি করা এবং সেখানে সালাত আদায় করা :

বিভিন্ন দেশে করবস্থানকে লক্ষ্য করে অসংখ্য মসজিদ গড়ে উঠেছে।হাজার কিংবা শত বছর পূর্বে মারা গেছেন এমন কোন খ্যাতনামা আলেম বা পরহেযগার ব্যক্তির কবরকে একশ্রেণীর স্বার্থান্বেষী মহল পাকা করে তার উপরে সৌধ নির্মাণ করেছে এবং সেখানে মসজিদ তৈরি করেছে। 

এভাবে যুগের পর যুগ বিনাপূজির বিশাল ব্যবসা চলছে। এই সমস্তু স্থানে প্রতিষ্ঠিত মসজিদে কোটি কোটি মানুষ সালাত আদায় করছে। 

কখনো কবরকে সামনে করে  কখনো ডানে কিংবা কখনো বামে করে আবার কখনো পিছনে করে  অথচ এটা কবরস্থান এ ধরনের স্থানে কস্মিনকালেও সালাত হবে না।

আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, পৃথিবীর পুরোটাই মসজিদ। তবে কবরস্থান ও গোসলখানা ব্যতীত।


উক্ত হাদীছের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিছগণ বলেনকবর ক্বিবলার সামনে থাক কিংবা ডানে থাকবামে থাক বা পিছনে থাক সে স্থানে সালাত হবে না। 

কারণ কবরস্থান তাকেই বলা হয়যেখানে মানুষ দাফন করা হয়। তাছাড়া কবরের মাঝে সালাত  আদায় করা যাবে না মর্মে স্পষ্ট ছহীহ হাদীছ এসেছে,


আনাস (রাঃ) বলেনরাসূল(সা.)কবরের মাঝে সালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে উপমহাদেশে মৃত ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে লক্ষ লক্ষ মাজার তৈরি হয়েছে। 

আর সেগুলোতে একাধিক মসজিদও আছে। যা মৃত পীরকে বেষ্টন করে রেখেছে। তাকে লক্ষ্য করে প্রত্যেক বছর উরস করা হয়। লাখ লাখ মানুষের ভীড় জমে। 

এই আনন্দ অনুষ্ঠান করে তাকে মূর্তিতে পরিণত করা হয়েছে। আর এই তীর্থস্থানেই মানুষ কোটি কোটি টাকাগরুছাগলমহিষ ইত্যাদি নযর-নেওয়ায করছে। 

যার মূল উদ্দেশ্যই থাকে মৃত পীরকে খুশি করা। উক্ত স্থান সমূহে প্রতিষ্ঠিত মসজিদে সালাত আদায় করা পরিষ্কার হারাম।


জুনদুব (রাঃ) বলেনআমি রাসূল (সা.)-কে বলতে শুনেছি যেসাবধান! তোমাদের পূর্ববর্তীরা তাদের নবী ও সকর্মশীল ব্যক্তিদের কবরগুলোকে মসজিদে পরিণত করেছিল। সাবধান! 

তোমার কবরকে মসজিদে পরিণত করো না। নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে এটা থেকে নিষেধ করছি।

আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেনরাসূল (সা.) বলেছেনতোমার  তোমাদের ঘরসমূহকে কবরে পরিণত করো না এবং আমার কবরকে আনন্দ অনুষ্ঠানে পরিণত করো না। 

তোমরা আমার উপর দরূদ পাঠ কর।  তোমরা যেখানেই থাক তোমাদের দরূদ আমার কাছে পৌছানো হয়।



অন্য হাদীছে এসেছেতোমরা আমার কবরকে আনন্দ অনুষ্ঠানের স্থান হিসাবে গ্রহণ করো না।আত্বা ইবনু ইয়াসার (রাঃ) হতে বর্ণিতরাসূল (সা.) বলেন, “হে আল্লাহ! আমার কবরকে মূর্তিতে পরিণত করবেন নাযেখানে ইবাদত করা হবে। 

ঐ জাতির উপর আল্লাহ কঠিন গযব বর্ষণ করেনযারা তাদের নবীদের কবরকে মসজিদে পরিণত করেছে। অন্য বর্ণনায় এসেছে,

যায়েদ ইবনু আসলাম (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেনরাসূল(সা.) বলেছেন, “হে আল্লাহ! আমার কবরকে মূর্তিতে পরিণত করবেন নাযেখানে সালাত আদায় করা হবে।ঐ জাতির উপর আল্লাহ কঠিন শাস্তি বর্ষণ করেনযারা তাদের নবীদের কবরকে মসজিদে পরিণত করেছে।


জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিতরাসূল (সা.) কবর পাকা করতেতার উপর বসতে এবং এর উপর সমাধি সৌধ নির্মাণ করতে নিষেধ করেছেন।

আবু মারছাদ গানাবী (রাঃ) বলেনআমি রাসূল (সা.)-কে বলতে শুনেছিতোমরা কবরের দিকে সালাত আদায় কর না এবং তার উপর বস না। 

বিশ্ব ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ যিনিতিনি তাঁর কবরস্থানকে উরস বা আনন্দ অনুষ্ঠানে পরিণত করতে অত্যন্ত কঠোর ভাষায় নিষেধ করেছেন। 

নবী-রাসূল ও সৎকর্মশীল বান্দাদের কবরকে মসজিদে পরিণত করতে নিষেধ করেছেন এবং যারা এ ধরনের জঘন্য কাজ করবে তাদেরকে কঠোর শাস্তি দানের জন্য আল্লাহর নিকট বদ দু'আ করেছেন। 

তাহলে সাধারণ লোকদের কবরকে কিভাবে মসজিদের স্থান হিসাবে নির্ধারণ করা যাবেতাদের কবরস্থানে কিভাবে উরস করা যাবে

এ সমস্ত কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও মৃত ব্যক্তির কবরকে কেন্দ্র করে কেন লক্ষ লক্ষ মাযার-খানকা তৈরি হয়েছে

সেখানে মসজিদ তৈরি করে কেন কোটি কোটি মানুষের ঈমান হরণ করা হচ্ছেকবরকে সিজদা করেসেখানে। মাথা ঠুকে আল্লাহর  তাওহীদী চেতনাকে কেন নস্যাৎ করা হচ্ছে তাদের।

কর্ণকুহরে এই সমস্তু বাণী কেন প্রবেশ করে নাকারণ হলপ্রতিনিয়ত তাদেরকে নগ্ন জিন শয়তান মূর্তিপূজা করতে উৎসাহিত করছে। উবাই ইবনু কা'ব (রাঃ) বলেনপ্রত্যেক মূর্তির সাথে একজন করে নারী জিন থাকে। আল্লাহ তা'আলা বলেন

আল্লাহকে বাদ দিয়ে তারা কেবল নারীদের আহ্বান করে। বরং তারা বিদ্রোহী শয়তানকে আহ্বান করে (নিসা ১১৭)। নিম্নের হাদীছে আরো পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছে।


আবু তোফাইল (রাঃ) বলেনরাসূল (সা.) যখন মক্কা বিজয় করলেন তখন খালিদ ইবনু ওয়ালিদ (রাঃ)-কে একটি খেজুর গাছের নিকট পাঠালেন। সেখানে উযযা নামক মূর্তি ছিল। 

খালিদ (রাঃ) সেখানে আসলেন মূর্তিটি তিনটি বাবলা গাছের উপর ছিল। তিনি সেগুলো কেটে ফেললেন এবং তার উপরে তৈরি করা ঘর ভেঙ্গে দিলেন। 

অতঃপর তিনি রাসূল (সা.)-কে এসে খবর দিলেন তিনি বললেনফিরে যাওতুমি কোন অপরাধ করোনি। অতঃপর খালিদ (রাঃ) ফিরে গেলেন। 

যখন খালিদ (রাঃ)-কে পাহারাদাররা দেখল তখন তারা ঐ মূর্তিকে পাহাড়ের মধ্যে রক্ষা করার জন্য বেষ্টন করে। ঘিরে ফেলল এবং হে উযযা! বলে ডাকতে লাগল। 

খালিদ (রাঃ) কাছে এসে বিড়ত চুল বিশিষ্ট এক নগ্ন মহিলাকে দেখতে পেলেনযার মাথা কাদায় ল্যাপ্টানো। তিনি তাকে তরবারি দিয়ে আঘাত করলেন এবং হত্যা করলেন। অতঃপর ফিরে এসে রাসূল (সা.)-কে খবর দিলেন। 

তখন রাসূল (সা.)বললেনএটাই সেই উযযা। উল্লেখ্য যেশয়তানের পরামর্শেই মূর্তিপূজার সূচনা হয়েছে। শয়তান জিনের রূপ ধারণ করে প্রত্যেক মূর্তির মাঝে অবস্থান করে এবং মানুষকে এভাবেই পথভ্রষ্ট করে। 

এজন্যই কা'বার চতুর্পাশ্বে স্থাপিত ৩৬০ মূর্তিকে মক্কা বিজয়ের দিন রাসূল (সা.) মুহূর্তের মধ্যে নিজ হাতে ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছিলেন। পিতা ইবরাহীম (আঃ) যেমন মূর্তি ভেঙ্গে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিলেন (আম্বিয়া ৫৭-৫৮) যোগ্য সন্তান হিসাবে মুহাম্মাদ (সা.)ও তাই করলেন। 

রাসূল (সা. বলেনআমাকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে মূর্তি ভেঙ্গে খান খান করার জন্য এবং আল্লাহর তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করার জন্যযেন তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক না করা হয়।আলী (রাঃ)-কে বলেছিলেন,

তুমি কোন মূর্তি না ভাঙ্গা পযন্ত ছাড়বে না এবং ছাড়বে না কোন উঁচু কবর যতক্ষণ না তা ভেঙ্গে মাটির সাথে মিশিয়ে দিবে। উক্ত নির্দেশের কারণে ছাহাবায়ে কেরামও শিরকের আনাকে এক মুহূর্তের জন্যও বরদাশত করেননি। শিরকের শিখী উপড়ে ফেলেছেন।


নাফে (রাঃ) বলেনওমর (রাঃ) এ মর্মে জানতে পারলেন যেযে গাছের নীচে রাসূল (সা.) বায়আত নিয়েছিলেন ঐ গাছের কাছে মানুষ ভীড় করছে। তখন তিনি নির্দেশ দান করলে কেটে ফেলা হয়। 

অতএব মসজিদের নামে যেভাবে মূর্তি ও কবরপূজা চলছে তা প্রাচীন যুগের শিরকের ঘাটির শামিল। মুসলিম উম্মাহকে সচেতনভাবে সেগুলো ত্যাগ করতে হবে। 

কাবা চত্তর থেকে রাসূল (সা.) যেভাবে মূর্তি অপসারণ করেছিলেন সেভাবে তা অপসারণ করতে হবে। সালাতের স্থানগুলোকে যাবতীয় শিরক থেকে মুক্ত করতে হবে।

 


৩৯৭. ছহীহ বুখারী হা/১১৮৯, ১/১৫৮ পৃঃ, (ইফাবা হা/১১১৬, ২/৩২৭ পৃঃ); মিশকাত | হা/৬৯৩, পৃঃ ৬৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৬৪১, ২/২১৪ পৃঃ।

৩৯৮. তিরমিযী হা/৩১৭, ১/৭৩ পৃঃ; ইবনু মাজাহ হা/৭৪৫; মিশকাত হা/৭৩৭, পৃঃ ৭০; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৬৮১, ২/২২৮ পৃঃ, ‘ছালাত' অধ্যায়, ‘মসজিদ সমূহঅনুচ্ছেদ।

৩৯৯, আলবানী, আহকামুল জানাইয, পৃঃ ২১৪; আছ-ছামারল মুত্বাব, পৃঃ ৩৫৭

৪০০. আছ-ছামারল মুত্ত্বত্বাব, পৃঃ ৩৫৭-

৪০১. ছহীহ ইবনু হিব্বান হা/২৩১৩, সনদ ছহীহ।

৪০২. ছহীহ মুসলিম হা/১২১৬, ১/২০১ পৃঃ, (ইফাবা হা/১০৬৯), মসজিদ সমূহঅধ্যায়,

অনুচ্ছেদ-৪; মিশকাত হা/৭১৩, পৃঃ ৬৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৬৬০, ২/২২০ পৃঃ।

৪০৩. আবুদাউদ হা/২০৪২, ১/২৭৯ পৃঃ, হজ্জ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১০০; নাসাঈ, মিশকাত হা/৯২৬, পৃঃ ৮৬; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৮৬৫, ২/৩১১ পৃঃ।।

৪০৪. মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/৭৫৪২; আলবানী, তাহযীরস সাজেদ, পৃঃ

১১৩।

৪০৫. মালেক মুওয়াত্ত্ব হা/৫৯৩, সনদ ছহীহ।

৪০৬. মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/৭৫৪৪, সনদ ছহীহ।

৪০৭. ছহীহ মুসলিম হা/২২৮৯, ১/৩১২ পৃঃ, ‘জানাযা অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৩২ (ইফাবা

| হা/২১১৪); মিশকাত হা/১৬৯৭, পৃঃ ১৪৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১৬০৬, ৪/৭৩ পৃঃ।।

৪০৮. ছহীহ মুসলিম হা/২২৯৫, ১/৩১২ পৃঃ, (ইফাবা হা/২১২০); মিশকাত হা/১৬৯৮, পৃঃ ১৪৮।

৪০৯. আহমাদ হা/২১২৬৯, সনদ হাসান; আল-আহাদীছুল মুখতারাহ হা/১১৫৭।

৪১০. নাসাঈ কুবরা হা/১১৫৪৭; মুসনাদে আবী ইয়ালা হা/৯০২, সনদ ছহীহ।

৪১১. সূরা নূহ ২৩; ছহীহ বুখারী হা/৪৯২০, ২/৭৩২ পৃঃ, ‘তাফসীরঅধ্যায়, সূরা নূহ।

৪১২. বুখারী হা/২৪৭৮, ১/৩৩৬ পৃঃ, ‘মাযালেম অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৩২; মুসলিম হা/৪৭২৫-

৪১৩. ছহীহ মুসলিম হা/১৯৬৭, ১/২৭৬ পৃঃ, (ইফাবা হা/১৮০০), ‘মুসাফিরের ছালাত অধ্যায়, | অনুচ্ছেদ-৫২

৪১৪. ছহীহ মুসলিম হা/২২৮৭, ১/৩১২ পৃঃ, (ইফাবা হা/২১১২); মিশকাত হা/১৬৯৬, পৃঃ ১৪৮।

 


(৪) মসজিদের পাশে মৃত ব্যক্তির কবর দেওয়া :

মৃত ব্যক্তি মুয়াযযিনের আযান ও ইমামের কিরাআত শুনতে পায়, এমন ধারণা করে সাধারণতঃ এটা করা হয়। অনেকে এ জন্য অছিয়তও করে যান। অথচ এগুলো ভ্রাড়ু আক্বীদা মাত্র। 

এভাবে অনেক মসজিদকে কবরস্থানে পরিণত করা হয়েছে। মূলতঃ মসজিদের জন্য ওয়াকফকৃত জমিতে কবর দেওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। না জেনে কবর দেওয়া হলে সেই কবরকে অন্যত্র স্থানাস্ত্র করতে হবে। 

আর যদি সেই কবর পুরাতন হয় তাহলে মাটির সাথে সমান করে দিতে হবে এবং ঐ জায়গা সাধারণ জায়গার মত ব্যবহার করতে হবে। অন্যথা সেখানে সালাত হবে না। 

এছাড়া মসজিদের পার্শ্বে পৃথক জমিতে কবর থাকলে অবশ্যই প্রাচীর দিয়ে মসজিদকে আলাদা করে নিতে হবে। মূলকথা মসজিদকে কবরের ধরাছোঁয়া থেকে দূরে রাখতে হবে।

 

পাঠকের সুবিধাথে অল্প কিছু লেখা দিয়েছি। তাতে আপনাদের পড়তে সুবিধা হবে।


চলবে...........


Post a Comment

أحدث أقدم

সূরা ফাতিহা

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন সালাত আদায় করল অথচ সূরা ফাতিহা পাঠ করল না, তার সালাত অসম্পূর্ণ রয়ে গেল।

এ কথাটি তিনি তিনবার বলেন। তখন আবু হুরায়রাকে জিজ্ঞেস করা হল, আমরা যখন ইমামের পিছনে থাকি? উত্তরে তিনি বললেন, তুমি চুপে চুপে পড়।

কেননা আমি রাসূল (সা.) -কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমি সালাতকে আমার মাঝে ও আমার বান্দার মাঝে দুই ভাগে ভাগ করেছি।

আমার বান্দার জন্য সেই অংশ যা সে চাইবে। বান্দা যখন বলে, ‘আল-হামদুলিল্লা-হি রাবিবল ‘আলামীন’ (যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি জগৎ সমূহের প্রতিপালক)। তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার প্রশংসা করল। বান্দা যখন বলে, ‘আর-রহমা-নির রহীম’ (যিনি করুণাময়, পরম দয়ালু)।

তখন আল্লাহ বলেন, বান্দা আমার গুণগান করল। বান্দা যখন বলে, ‘মা-লিকি ইয়াওমিদ্দ্বীন’ (যিনি বিচার দিবসের মালিক) তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমাকে সম্মান প্রদর্শন করল। বান্দা যখন বলে, ইয়্যা-কানা‘বুদু ওয়া ইয়্যা-কানাসতাঈন (আমরা কেবল আপনারই ইবাদত করি এবং আপনার নিকটই সাহায্য প্রার্থনা করি)।

তখন আল্লাহ বলেন, এটা আমার ও আমার বান্দার মাঝে আধাআধি ভাগ (অর্থাৎ ইবাদত আমার জন্য আর প্রার্থনা বান্দার জন্য) এবং আমার বান্দার জন্য সেই অংশ রয়েছে, যা সে চাইবে।

যখন বান্দা বলে, ‘ইহদিনাছ ছিরাত্বাল মুস্তাক্বীম, ছিরা-ত্বল্লাযীনা আন‘আমতা ‘আলায়হিম, গয়রিল মাগযূবি ‘আলায়হিম ওয়ালায য-ল্লীন (আপনি আমাদের সরল পথ প্রদর্শন করুন।

তাদের পথ যাদের উপর আপনি রহম করেছেন। তাদের পথ নয় যারা অভিশপ্ত এবং পথভ্রষ্ট)। তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা যা চেয়েছে তা তার জন্য’। (আমীন)।

দশটি সূরা এবং তার উচ্চারণ ও অনুবাদ

() সূরা নাস


قُلْ أَعُوْذُ بِرَبِّ النَّاسِ () مَلِكِ النَّاسِ () إِلهِ النَّاسِ () مِنْ شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ () اَلَّذِيْ يُوَسْوِسُ فِي صُدُوْرِ النَّاسِ ()مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ ()

উচ্চারণ:- ক্বুল আঊযু বিরব্বিন্না-স। মালিকিন্না-স। ইলা-হিন্না-স। মিন্শার্রিল অসওয়া-সিল খান্না-স। আল্লাযী ইউওয়াসবিসু ফী সুদূরিন্না-স। মিনাল জিন্নাতি অন্না-

অর্থ:- তুমি বল, আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি, মানুষের প্রতিপালক, মানুষের অধীশ্বর, মানুষের উপাস্যের কাছে- তার কুমন্ত্রণার অনিষ্ট হতে, যে সুযোগমত আসে (কুমন্ত্রণা দিয়ে) সরে পড়ে। যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের হৃদয়ে, জিন মানুষের মধ্য হতে

() সূরা ফালাক্ব


قُلْ أَعُوْذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ () مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ () وَمِنْ شَرِّ غَاسِقٍ إِذَا وَقَبَ () وَمِنْ شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ () وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَاحَسَدَ ()

উচ্চারণ:- ক্বুল আঊযু বিরব্বিল ফালাক্ব। মিন শার্রি মা খালাক্ব। অমিন শার্রি গা-সিক্বিন ইযা অক্বাব। অমিন শার্রিন্নাফ্ফা-ষা-তি ফিল উক্বাদ। অমিন শার্রিহা-সিদিন ইযাহাসাদ

অর্থ:- তুমি বল, আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি ঊষার প্রভুর নিকট। তিনি যা সৃষ্টি করেছেন তার অনিষ্ট হতে। এবং রাতের অনিষ্ট হতে যখন তা গভীর অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়। এবং গ্রন্থিতে ফুত্কারিণী (যাদুকরী)দের অনিষ্ট হতে। এবং হিংসুকের অনিষ্ট হতে যখন সে হিংসা করে

() সূরা ইখলাস


قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ () اَللهُ الصَّمَدُ () لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُوْلَدْ () وَلَمْ يَكُنْ لَّهُ كُفُواً أَحَدٌ ()

উচ্চারণ:- ক্বুল হুওয়াল্লা-হু আহাদ। আল্লা-হুস সামাদ। লাম য়্যালিদ, অলাম ইউলাদ। অলাম য়্যাকুল্লাহু কুফুওয়ান আহাদ

অর্থ:- বল, তিনি আল্লাহ একক। আল্লাহ ভরসাস্থল। তিনি জনক নন এবং জাতকও নন। আর তাঁর সমকক্ষ কেউই নেই

() সূরা লাহাব


تَبَّتْ يَدَا أَبِيْ لَهَبٍ وَّتَبَّ () مَا أَغْنى عَنْهُ مَالُهُ وَمَا كَسَبَ () سَيَصْلى نَاراً ذَاتَ لَهَبٍ () وَامْرَأَتُهُ حَمَّالَةَ الْحَطَبِ () فِيْ جِيْدِهَا حَبْلٌ مِّنْ مَّسَدٍ ()

উচ্চারণ:- তাব্বাৎ য়্যাদা আবী লাহাবিঁউঅতাব্ব মা আগনা আনহু মা-লুহু অমা কাসাব। সায়্যাস্বলা না-রান যা-তা লাহাব। অমরাআতুহুহাম্মা-লাতালহাত্বাব। ফী জীদিহাহাবলুম মিম মাসাদ

অর্থ:- ধ্বংস হোক আবূ লাহাবের দুইহাত এবং ধ্বংস হোক সে নিজেও। তার ধন-সম্পদ উপর্জিত বস্তু তার কোন উপকারে আসবে না। সে প্রবেশ করবে লেলিহান শিখাবিশিষ্ট অগ্নিকুন্ডে। আর তার স্ত্রীও -যে কাঠের বোঝা বহনকারিণী। ওর গলদেশে খেজুর চোকার রশি হবে

() সূরা নাস্বর


إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللهِ وَالْفَتْحُ () وَرَأَيْتَ النَّاسَ يَدْخُلُوْنَ فِيْ دِيْنِ اللهِ أَفْوَاجاً () فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَاسْتَغْفِرْهُإِنَّهُ كَانَ تَوَّاباً ()

উচ্চারণ:- ইযা জা- নাস্বরুল্লা-হি অল ফাতহ। অরাআইতান্না-সা ইয়্যাদখুলুনা ফী দীনিল্লা-হি আফওয়াজা। ফাসাব্বিহ্বিহামদি রাব্বিকা অস্তাগফিরহু; ইন্নাহু কা-না তাউওয়া-বা

অর্থ:- যখন আসবে আল্লাহর সাহায্য বিজয়। তুমি দেখবে মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করতে। তখন তুমি তোমার প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা কর এবং তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল

() সূরা কা-ফিরুন


قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُوْنَ () لاَ أَعْبُدُ مَا تَعْبُدُوْنَ () وَلاَ أَنْتُمْ عَابِدُوْنَ مَا أَعْبُدُ () وَلاَ أَنَا عَابِدٌ مَّا عَبَدْتُّمْ () وَلاَ أَنْتُمْ عَابِدُوْنَ مَا أَعْبُدُ () لَكُمْ دِيْنُكُمْ وَلِيَ دِيْنِ ()

উচ্চারণ:- ক্বুল ইয়া আই য়ুহাল কা-ফিরুন। লা- বুদু মা- তাবুদূন। অলা- আন্তুম ’-বিদূনা মা- বুদ। অলা- আনা ’-বিদুম মা বাত্তুম। অলা- আন্তুম ’-বিদূনা মা- বুদ। লাকুম দীনুকুম অলিয়া দীন

অর্থ:- বল, হে কাফের দল! আমি তার উপাসনা করি না, যার উপাসনা তোমরা কর। তোমরাও তাঁর উপাসক নও, যাঁর উপাসনা আমি করি। আমি তার উপাসক হ্ না, যার উপাসনা তোমরা কর। আর তোমরাও তাঁর উপাসক নও, যাঁর উপাসনা আমি করি। তোমাদের ধর্ম তোমাদের এবং আমার ধর্ম আমার (কাছে প্রিয়)

() সূরা কাউষার


إِنَّا أَعْطَيْنَاكَ الْكَوْثَرَ () فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ () إِنَّ شَانِئَكَ هُوَ الأَبْتَرُ ()

উচ্চারণ:- ইন্না- ত্বাইনা-কাল কাউষার। ফাস্বাল্লি লিরব্বিকা অন্হার। ইন্না- শা-নিআকা হুওয়াল আবতার

অর্থ:- নিঃসন্দেহে আমি তোমাকে কাউসার (হাওয) দান করেছি। সুতরাং তুমি তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে নামায পড় এবং কুরবানী কর। নিশ্চয় তোমার শত্রুই হল নির্বংশ

() সূরা ক্বুরাইশ


لإِيْلاَفِ قُرَيْشٍ () إِيْلاَفِهِمْ رِحْلَةَ الشِّتَاءِ وَالصَّيْفِ () فَلْيَعْبُدُوْا رَبَّ هذَا الْبَيْتِ () اَلَّذِيْ أَطْعَمَهُمْ مِنْجُوْعٍ وَّآمَنَهُمْ مِّنْ خَوْفٍ ()

উচ্চারণ:- লিঈলা-ফি ক্বুরাইশ্ঈলা-ফিহিম রিহ্লাতাশ শিতা- অস্স্বাইফ্ফাল য়্যাবুদু রব্বাহা-যাল বাইত্ আল্লাযী আত্বআমাহুম মিন জু অআ-মানাহুম মিন খাঊফ

অর্থ:- যেহেতু কুরাইশের জন্য শীত গ্রীষ্মের সফরকে তাদের স্বভাব সুলভ করা হয়েছে, সেহেতু ওরা উপাসনা করুক এই গৃহের রক্ষকের। যিনি ক্ষুধায় ওদেরকে আহার দিয়েছেন এবং ভীতি হতে নিরাপদ করেছেন

() সূরা ফীল


أَلَمْ تَرَ كَيْفَ فَعَلَ رَبُّكَ بِأَصْحَابِ الْفِيْلِ () أَلَمْ يَجْعَلْ كَيْدَهُمْ فِيْ تَضْلِيْلٍ () وَأَرْسَلَ عَلَيْهِمْ طَيْراً أَبَابِيْلَ () تَرْمِيْهِمْ بِحِجَارَةٍ مِّنْ سِجِّيْلٍ () فَجَعَلَهُمْ كَعَصْفٍ مَّأْكُوْلٍ ()

উচ্চারণ:- আলাম তারা কাইফা ফাআলা রব্বুকা বিআস্বহা-বিল ফীল। আলাম য়্যাজ্আল কাইদাহুম ফী তায্বলীল। অআরসালা আলাইহিম ত্বাইরান আবা-বিল। তারমীহিম বিহিজারাতিম মিন সিজ্জীল। ফাজাআলাহুম কাআস্বফিম মাকূল

অর্থ:- তুমি কি দেখ নি, তোমার প্রতিপালক হ্স্তীবাহিনীর সঙ্গে কি করেছিলেন? তিনি কি ওদের কৌশলকে ব্যর্থ করে দেন নি? তিনি তাদের উপর ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি প্রেরণ করেন। যারা ওদের উপর নিক্ষেপ করে কঙ্কর। অতঃপর তিনি ওদেরকে ভক্ষিত তৃণসদৃশ করে দেন

(১০) সূরা আসর


وَالْعَصْرِ () إِنَّ الإِنْسَانَ لَفِيْ خُسْرٍ () إِلاَّ الَّذِيْنَ آمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ ()

উচ্চারণ:- অল আসর। ইন্নাল ইনসা-না লাফী খু সর। ইল্লাল্লাযীনা -মানূ অআমিলুস স্বা-লিহা-তি অতাওয়াস্বাউবিলহাক্বি অতাওয়াস্বাউবিসস্বাবর

অর্থ:- মহাকালের শপথ! মানুষ অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত। তবে তারা নয়, যারা ঈমান এনে সৎকর্ম করেছে এবং একে অপরকে সত্য ধৈর্যের উপদেশ দিয়েছে