বিসমিল্লাহির রহমানির
রহিম
মসজিদ সমূহ
(৩) কবরস্থানে মসজিদ তৈরি করা এবং সেখানে সালাত আদায় করা :
বিভিন্ন দেশে করবস্থানকে লক্ষ্য করে অসংখ্য মসজিদ গড়ে উঠেছে।হাজার কিংবা শত বছর পূর্বে মারা গেছেন এমন কোন খ্যাতনামা আলেম বা পরহেযগার ব্যক্তির কবরকে একশ্রেণীর স্বার্থান্বেষী মহল পাকা করে তার উপরে সৌধ নির্মাণ করেছে এবং সেখানে মসজিদ তৈরি করেছে।
এভাবে যুগের পর যুগ বিনাপূজির বিশাল ব্যবসা চলছে। এই সমস্তু স্থানে প্রতিষ্ঠিত মসজিদে কোটি কোটি মানুষ সালাত আদায় করছে।
কখনো কবরকে সামনে করে কখনো ডানে কিংবা কখনো বামে করে আবার কখনো পিছনে করে অথচ এটা কবরস্থান এ ধরনের স্থানে কস্মিনকালেও সালাত হবে না।
আবু
সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন,
রাসূল (সা.) বলেছেন, পৃথিবীর পুরোটাই মসজিদ।
তবে কবরস্থান ও গোসলখানা ব্যতীত।
উক্ত হাদীছের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিছগণ বলেন, কবর ক্বিবলার সামনে থাক কিংবা ডানে থাক, বামে থাক বা পিছনে থাক সে স্থানে সালাত হবে না।
কারণ কবরস্থান তাকেই বলা হয়, যেখানে মানুষ দাফন করা হয়। তাছাড়া কবরের মাঝে সালাত আদায় করা যাবে না মর্মে স্পষ্ট ছহীহ হাদীছ এসেছে,
আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল(সা.)কবরের মাঝে সালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে উপমহাদেশে মৃত ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে লক্ষ লক্ষ মাজার তৈরি হয়েছে।
আর সেগুলোতে একাধিক মসজিদও আছে। যা মৃত পীরকে বেষ্টন করে রেখেছে। তাকে লক্ষ্য করে প্রত্যেক বছর উরস করা হয়। লাখ লাখ মানুষের ভীড় জমে।
এই আনন্দ অনুষ্ঠান করে তাকে মূর্তিতে পরিণত করা হয়েছে। আর এই তীর্থস্থানেই মানুষ কোটি কোটি টাকা, গরু, ছাগল, মহিষ ইত্যাদি নযর-নেওয়ায করছে।
যার মূল উদ্দেশ্যই থাকে মৃত পীরকে খুশি করা। উক্ত স্থান সমূহে প্রতিষ্ঠিত মসজিদে সালাত আদায় করা পরিষ্কার হারাম।
জুনদুব (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (সা.)-কে বলতে শুনেছি যে, সাবধান! তোমাদের পূর্ববর্তীরা তাদের নবী ও সকর্মশীল ব্যক্তিদের কবরগুলোকে মসজিদে পরিণত করেছিল। সাবধান!
তোমার কবরকে মসজিদে পরিণত করো না। নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে এটা থেকে নিষেধ করছি।
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, তোমার তোমাদের ঘরসমূহকে কবরে পরিণত করো না এবং আমার কবরকে আনন্দ অনুষ্ঠানে পরিণত করো না।
তোমরা আমার উপর দরূদ পাঠ কর। তোমরা যেখানেই থাক তোমাদের দরূদ আমার কাছে পৌছানো হয়।
অন্য হাদীছে এসেছে, তোমরা আমার কবরকে আনন্দ অনুষ্ঠানের স্থান হিসাবে গ্রহণ করো না।আত্বা ইবনু ইয়াসার (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন, “হে আল্লাহ! আমার কবরকে মূর্তিতে পরিণত করবেন না, যেখানে ইবাদত করা হবে।
ঐ জাতির উপর আল্লাহ কঠিন গযব বর্ষণ করেন, যারা তাদের নবীদের কবরকে মসজিদে পরিণত করেছে। অন্য বর্ণনায় এসেছে,
যায়েদ ইবনু আসলাম (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, “হে আল্লাহ! আমার কবরকে মূর্তিতে পরিণত করবেন না, যেখানে সালাত আদায় করা হবে।ঐ জাতির উপর আল্লাহ কঠিন শাস্তি বর্ষণ করেন, যারা তাদের নবীদের কবরকে মসজিদে পরিণত করেছে।
জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) কবর পাকা করতে, তার উপর বসতে এবং এর উপর সমাধি সৌধ নির্মাণ করতে নিষেধ করেছেন।
আবু মারছাদ গানাবী (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, তোমরা কবরের দিকে সালাত আদায় কর না এবং তার উপর বস না।
বিশ্ব ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ যিনি, তিনি তাঁর কবরস্থানকে উরস বা আনন্দ অনুষ্ঠানে পরিণত করতে অত্যন্ত কঠোর ভাষায় নিষেধ করেছেন।
নবী-রাসূল ও সৎকর্মশীল বান্দাদের কবরকে মসজিদে পরিণত করতে নিষেধ করেছেন এবং যারা এ ধরনের জঘন্য কাজ করবে তাদেরকে কঠোর শাস্তি দানের জন্য আল্লাহর নিকট বদ দু'আ করেছেন।
তাহলে সাধারণ লোকদের কবরকে কিভাবে মসজিদের স্থান হিসাবে নির্ধারণ করা যাবে? তাদের কবরস্থানে কিভাবে উরস করা যাবে?
এ সমস্ত কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও মৃত ব্যক্তির কবরকে কেন্দ্র করে কেন লক্ষ লক্ষ মাযার-খানকা তৈরি হয়েছে?
সেখানে মসজিদ তৈরি করে কেন কোটি কোটি মানুষের ঈমান হরণ করা হচ্ছে? কবরকে সিজদা করে, সেখানে। মাথা ঠুকে আল্লাহর তাওহীদী চেতনাকে কেন নস্যাৎ করা হচ্ছে তাদের।
কর্ণকুহরে এই সমস্তু বাণী কেন প্রবেশ করে না? কারণ হল, প্রতিনিয়ত তাদেরকে নগ্ন জিন শয়তান মূর্তিপূজা করতে উৎসাহিত করছে। উবাই ইবনু কা'ব (রাঃ) বলেন, প্রত্যেক মূর্তির সাথে একজন করে নারী জিন থাকে। আল্লাহ তা'আলা বলেন
আল্লাহকে বাদ দিয়ে তারা কেবল নারীদের আহ্বান করে। বরং তারা বিদ্রোহী শয়তানকে আহ্বান করে’ (নিসা ১১৭)। নিম্নের হাদীছে আরো পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছে।
আবু তোফাইল (রাঃ) বলেন, রাসূল (সা.) যখন মক্কা বিজয় করলেন তখন খালিদ ইবনু ওয়ালিদ (রাঃ)-কে একটি খেজুর গাছের নিকট পাঠালেন। সেখানে উযযা নামক মূর্তি ছিল।
খালিদ (রাঃ) সেখানে আসলেন মূর্তিটি তিনটি বাবলা গাছের উপর ছিল। তিনি সেগুলো কেটে ফেললেন এবং তার উপরে তৈরি করা ঘর ভেঙ্গে দিলেন।
অতঃপর তিনি রাসূল (সা.)-কে এসে খবর দিলেন তিনি বললেন, ফিরে যাও, তুমি কোন অপরাধ করোনি। অতঃপর খালিদ (রাঃ) ফিরে গেলেন।
যখন খালিদ (রাঃ)-কে পাহারাদাররা দেখল তখন তারা ঐ মূর্তিকে পাহাড়ের মধ্যে রক্ষা করার জন্য বেষ্টন করে। ঘিরে ফেলল এবং হে উযযা! বলে ডাকতে লাগল।
খালিদ (রাঃ) কাছে এসে বিড়ত চুল বিশিষ্ট এক নগ্ন মহিলাকে দেখতে পেলেন, যার মাথা কাদায় ল্যাপ্টানো। তিনি তাকে তরবারি দিয়ে আঘাত করলেন এবং হত্যা করলেন। অতঃপর ফিরে এসে রাসূল (সা.)-কে খবর দিলেন।
তখন রাসূল (সা.)বললেন, এটাই সেই উযযা। উল্লেখ্য যে, শয়তানের পরামর্শেই মূর্তিপূজার সূচনা হয়েছে। শয়তান জিনের রূপ ধারণ করে প্রত্যেক মূর্তির মাঝে অবস্থান করে এবং মানুষকে এভাবেই পথভ্রষ্ট করে।
এজন্যই কা'বার চতুর্পাশ্বে স্থাপিত ৩৬০ মূর্তিকে মক্কা বিজয়ের দিন রাসূল (সা.) মুহূর্তের মধ্যে নিজ হাতে ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছিলেন। পিতা ইবরাহীম (আঃ) যেমন মূর্তি ভেঙ্গে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিলেন (আম্বিয়া ৫৭-৫৮) যোগ্য সন্তান হিসাবে মুহাম্মাদ (সা.)ও তাই করলেন।
রাসূল (সা. বলেন, আমাকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে মূর্তি ভেঙ্গে খান খান করার জন্য এবং আল্লাহর তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করার জন্য, যেন তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক না করা হয়।আলী (রাঃ)-কে বলেছিলেন,
তুমি কোন মূর্তি না ভাঙ্গা পযন্ত ছাড়বে না এবং ছাড়বে না কোন উঁচু কবর যতক্ষণ না তা ভেঙ্গে মাটির সাথে মিশিয়ে দিবে। উক্ত নির্দেশের কারণে ছাহাবায়ে কেরামও শিরকের আনাকে এক মুহূর্তের জন্যও বরদাশত করেননি। শিরকের শিখী উপড়ে ফেলেছেন।
নাফে (রাঃ) বলেন, ওমর (রাঃ) এ মর্মে জানতে পারলেন যে, যে গাছের নীচে রাসূল (সা.) বায়আত নিয়েছিলেন ঐ গাছের কাছে মানুষ ভীড় করছে। তখন তিনি নির্দেশ দান করলে কেটে ফেলা হয়।
অতএব মসজিদের নামে যেভাবে মূর্তি ও কবরপূজা চলছে তা প্রাচীন যুগের শিরকের ঘাটির শামিল। মুসলিম উম্মাহকে সচেতনভাবে সেগুলো ত্যাগ করতে হবে।
কাবা চত্তর থেকে রাসূল (সা.) যেভাবে মূর্তি অপসারণ করেছিলেন সেভাবে তা অপসারণ করতে হবে। সালাতের স্থানগুলোকে যাবতীয় শিরক থেকে মুক্ত করতে হবে।
৩৯৭.
ছহীহ বুখারী হা/১১৮৯,
১/১৫৮ পৃঃ, (ইফাবা হা/১১১৬, ২/৩২৭ পৃঃ); মিশকাত | হা/৬৯৩, পৃঃ ৬৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত
হা/৬৪১, ২/২১৪ পৃঃ।
৩৯৮.
তিরমিযী হা/৩১৭,
১/৭৩ পৃঃ; ইবনু মাজাহ হা/৭৪৫; মিশকাত হা/৭৩৭, পৃঃ ৭০; বঙ্গানুবাদ মিশকাত
হা/৬৮১, ২/২২৮ পৃঃ, ‘ছালাত' অধ্যায়, ‘মসজিদ সমূহ’ অনুচ্ছেদ।
৩৯৯, আলবানী, আহকামুল জানাইয, পৃঃ ২১৪; আছ-ছামারল মুত্বাব, পৃঃ ৩৫৭
৪০০. আছ-ছামারল মুত্ত্বত্বাব, পৃঃ ৩৫৭-
৪০১.
ছহীহ ইবনু হিব্বান হা/২৩১৩,
সনদ ছহীহ।
৪০২.
ছহীহ মুসলিম হা/১২১৬,
১/২০১ পৃঃ, (ইফাবা হা/১০৬৯), মসজিদ সমূহ’ অধ্যায়,
অনুচ্ছেদ-৪; মিশকাত হা/৭১৩, পৃঃ ৬৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত
হা/৬৬০, ২/২২০ পৃঃ।
৪০৩. আবুদাউদ হা/২০৪২, ১/২৭৯ পৃঃ, হজ্জ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১০০; নাসাঈ, মিশকাত হা/৯২৬, পৃঃ ৮৬; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৮৬৫, ২/৩১১ পৃঃ।।
৪০৪.
মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/৭৫৪২; আলবানী, তাহযীরস সাজেদ, পৃঃ
১১৩।
৪০৫. মালেক মুওয়াত্ত্ব হা/৫৯৩, সনদ ছহীহ।
৪০৬.
মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/৭৫৪৪, সনদ ছহীহ।
৪০৭.
ছহীহ মুসলিম হা/২২৮৯,
১/৩১২ পৃঃ, ‘জানাযা অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৩২ (ইফাবা
|
হা/২১১৪); মিশকাত হা/১৬৯৭, পৃঃ ১৪৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত
হা/১৬০৬,
৪/৭৩ পৃঃ।।
৪০৮. ছহীহ মুসলিম হা/২২৯৫, ১/৩১২ পৃঃ, (ইফাবা হা/২১২০); মিশকাত হা/১৬৯৮, পৃঃ ১৪৮।
৪০৯. আহমাদ হা/২১২৬৯, সনদ হাসান; আল-আহাদীছুল মুখতারাহ হা/১১৫৭।
৪১০.
নাসাঈ কুবরা হা/১১৫৪৭;
মুসনাদে আবী ইয়ালা
হা/৯০২, সনদ ছহীহ।
৪১১.
সূরা নূহ ২৩;
ছহীহ বুখারী হা/৪৯২০, ২/৭৩২ পৃঃ, ‘তাফসীর’ অধ্যায়, সূরা নূহ।
৪১২. বুখারী হা/২৪৭৮, ১/৩৩৬ পৃঃ, ‘মাযালেম অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৩২; মুসলিম হা/৪৭২৫-
৪১৩.
ছহীহ মুসলিম হা/১৯৬৭,
১/২৭৬ পৃঃ, (ইফাবা হা/১৮০০), ‘মুসাফিরের ছালাত
অধ্যায়,
| অনুচ্ছেদ-৫২
৪১৪.
ছহীহ মুসলিম হা/২২৮৭,
১/৩১২ পৃঃ, (ইফাবা হা/২১১২); মিশকাত হা/১৬৯৬, পৃঃ ১৪৮।
(৪) মসজিদের পাশে মৃত ব্যক্তির কবর দেওয়া :
মৃত ব্যক্তি মুয়াযযিনের আযান ও ইমামের কিরাআত শুনতে পায়, এমন ধারণা করে সাধারণতঃ এটা করা হয়। অনেকে এ জন্য অছিয়তও করে যান। অথচ এগুলো ভ্রাড়ু আক্বীদা মাত্র।
এভাবে অনেক মসজিদকে কবরস্থানে পরিণত করা হয়েছে। মূলতঃ মসজিদের জন্য ওয়াকফকৃত জমিতে কবর দেওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। না জেনে কবর দেওয়া হলে সেই কবরকে অন্যত্র স্থানাস্ত্র করতে হবে।
আর যদি সেই কবর পুরাতন হয় তাহলে মাটির সাথে সমান করে দিতে হবে এবং ঐ জায়গা সাধারণ জায়গার মত ব্যবহার করতে হবে। অন্যথা সেখানে সালাত হবে না।
এছাড়া মসজিদের পার্শ্বে পৃথক জমিতে কবর থাকলে অবশ্যই প্রাচীর দিয়ে মসজিদকে
আলাদা করে নিতে হবে। মূলকথা মসজিদকে কবরের ধরাছোঁয়া থেকে দূরে রাখতে হবে।
পাঠকের সুবিধাথে অল্প
কিছু লেখা দিয়েছি। তাতে আপনাদের পড়তে সুবিধা হবে।
চলবে...........
إرسال تعليق