পবিত্রতা (ওযূ ও তায়াম্মুম)
পবিত্রতা (ওযূ ও তায়াম্মুম) ইসলাম পবিত্রতাকে ঈমানের অর্ধেক বলে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং পবিত্রতা সালাতের চাবি' বলেও ঘোষণা করেছে।
তাই মুসলিম মাত্রই পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে সর্বদা সচেতন থাকবে, যাতে ঈমান জাগ্রত থাকে। বিশেষ করে সালাতের ওযুর ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরত্ব দিবে।
কারণ ওযূ না হলে সালাত হবে না।সুতরাং ওযূ বিষয়ে যে সমস্ত-বিচ্যুতি রয়েছে, সেগুলো আমাদেরকে সংশোধন করে নিতে হবে।
(১) মিসওয়াক করার ফযীলত ৭০ গুণ :
শরী'আতে মিসওয়াক করার গুরত্ব অনেক। তবে
মিসওয়াক করার ফযীলত সম্পর্কে বর্ণিত উক্ত প্রসিদ্ধ কথাটি জাল।
(ক) আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুলগ্নাহ (ছাঃ) বলেন, যে সালাত মিসওয়াক করে আদায় করা হয়, সেই ছালাতে মিসওয়াক করা বিহীন ছালাতের চেয়ে ৭০ গুণ বেশী নেকী হয়।
তাহক্বীকৃ :
ইমাম বায়হাক্বী উক্ত বর্ণনা উলেখ করে বলেন,
৫৩. ছহীহ মুসলিম হা/৫৫৬, ১/১১৮ পৃঃ, (ইফাবা হা/৪২৫), ‘পবিত্রতা' অধ্যায়, | অনুচ্ছেদ-১; মিশকাত হা/২৮১, পৃঃ ৩৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/২৬২, ২/৩৭ পৃঃ।। ৫৪. ছহীহ আবুদাউদ হা/৬১, ১/৯ পৃঃ; তিরমিযী হা/৩, ১/৫ পৃঃ; মিশকাত হা/৩১২, পৃঃ
৪০; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/২৯১, ২/৫১ পৃঃ।। ৫৫. ছহীহ আবুদাউদ হা/১০১, ১/১৪ পৃঃ; ছহীহ ইবনে মাজাহ হা/৩৯৮ ও ৩৯৯, পৃঃ৩২; মিশকাত হা/৪০৪, পৃঃ ৪৬; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৩৭০, ২/৮২, ওযুর সুন্নাত সমূহ’ অনুচ্ছেদ।
৫৬. বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/১৫৯, ১ম খ-, পৃঃ ৬১-৬২; হাকেম হা/৫১৫; ইবনু খুযায়মাহ হা/১৩৭; মিশকাত হা/৩৮৯, পৃঃ ৪৫; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৩৫৯, ২/৭৬ পৃঃ।।
মু'আবিয়া ইবনু ইয়াহইয়া যুহরী থেকে বর্ণনা করেছে। সে নির্ভরযােগ্য নয়। অন্য সূত্রে উরওয়া আয়েশা থেকে বর্ণনা করেছে। কিন্তু তারা উভয়েই যঈফ। অন্য সূত্রে উরওয়া আক্বেদী থেকে বর্ণনা করেছে। কিন্তু সে মিথুক।
(খ) মিসওয়াক করে দুই রাকআত ছালাত আদায় করা- মিসওয়াক বিহীন সত্তর রাকআত
ছালাত পড়ার সমান।উলেখ্য, প্রচলিত তাবলীগ
৫৭. আলবানী, মিশকাত হা/৩৮৯-এর টীকা দ্রঃ, ১/১২৪ পৃঃ।
৫৮. মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হা/১৮০৩; মুসনাদে বাযযার ১/২৪৪ পৃঃ।
জামায়াতের অন্যতম প্রবক্তা মাওলানা মুহাম্মাদ ইউসুফ কান্দালভী প্রণীত ‘ মুখাব হাদীস গ্রন্থে ফযীলত সংক্রাড় অনেক জাল বা মিথ্যা হাদীছ উলেণ্টখ করা হয়েছে। উক্ত বর্ণনাটি তার অন্যতম।
তাহক্বীকৃ :
বর্ণনাটি জাল। ইমাম বাযযার বলেন, এর সনদে মুআবিয়া নামে একজন রাবী রয়েছে। সে ছাড়া আর কেউ এই হাদীছ বর্ণনা করেনি। ইবনু হাজার আসক্বালানী তাকে যঈফ বলেছেন। এছাড়া মুহাম্মাদ ইবনু ওমর নামে আরেকজন রাবী রয়েছে। সে মিথুক।
(গ) যায়েদ ইবনু খালেদ আল-জুহানী (রাঃ) বলেন, মিসওয়াক না করে রাসূল (ছাঃ) কোন ছালাতের জন্য বাড়ী থেকে বের হতেন না।”
তাহক্বীকৃ :
বর্ণনাটি যঈফ।
(ঘ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, মিসওয়াকের ১০টি বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
(১) মহান প্রতিপালকের সন্তুষ্টি
(২) শয়তানের অসন্তুষ্টি
(৩) ফেরেশতাদের জন্য আনন্দ
(8) আলজিভের সৌন্দর্য
(৫) দাঁতের আবরণ দূর করে
(৬) চোখকে জ্যোতিময় করে
(৭) মুখকে পবিত্র করে
(৮) কফ হ্রাস করে
(৯) এটি সুন্নাতের অদ্ভুক্ত
(১০) নেকী বৃদ্ধি করে।
৫৯. ঐ, মুখাব হাদীস, অনুবাদ : মাওলানা মুহাম্মাদ সা'আদ (ঢাকা : দারল কুতুব, পৃঃ ২৯৯।
60| হা/১৫০৩-এর ভাষ্য দ্রঃ; যঈফুল জামে' আছ-ছাগীর হা/৩১২৭।
৬১. ত্বাবারাণী হা/৫২৬১; মুঙ্খাব হাদীস, পৃঃ ৩০০।
৬২. যঈফ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/১৪৩।
৬৩. দারাকুত্নী ১/৫৮; সিলসিলা যঈফাহ হা/৪০১৬, ৯/২১ পৃঃ; ফাযায়েলে আমল
(বাংলা) ফাযায়েলে নামায অংশ, পৃঃ ৬৮-৬৯।
তাহক্বীকৃ :
হাদীছটি নিতাই যঈফ। ইমাম দারাকুত্নী হাদীছটি বর্ণনা করে বলেন, মুআলণ্টা ইবনু মাঈন দুর্বল ও পরিত্যক্ত রাবী।
(ঙ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুলন্টাহ (ছাঃ) বলেন, মিসওয়াক মুখ পরিষ্কারকারী, প্রতিপালকের সন্তুষ্টির কারণ ও চোখের জন্য জ্যোতিময়।
তাহক্বীকৃ :
হাদীছটি যঈফ। ইমাম
ত্বাবারাণী বলেন, হারিছ বিন মুসলিম
ছাড়া বাহরে সিকৃা থেকে অন্য কেউ এই হাদীছ বর্ণনা করেননি।
64.দারাকুত্নী ১/৫৮; সিলসিলা যঈফাহ হা/৪০১৬, ৯/২১ পৃঃ।
৬৫.ত্বাবারাণী, আল-মু'জামুল আওসাত্ব হা/৭৪৯৬।
-আল-মু'জামুল আওসাত্ব হা/৭৪৯৬; সিলসিলা যঈফাহ হা/৫২৭৬।
আবু উমামা(রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমরা মিসওয়াক কর। নিশ্চয়ই মিসওয়াক মুখ পরিষ্কারকারী ও আলশ্লাহর সন্তুষ্টির কারণ।
যখনই জিবরীল আমার নিকট আসেন, তখনই আমাকে মিসওয়াক করার জন্য বলেন।এমনকি আমি ভয় করি যে, আমার ও আমার উম্মতের উপর তা ফরয করা হয় কি-না।
আমার উম্মতের উপর কঠিন হয়ে যাওয়ার ভয় না করলে মিসওয়াক করা আমি উম্মতের উপর ফরয করে দিতাম।
আমি মিসওয়াক করতেই থাকি এমনকি আশংকা করি যে, আমি হয়ত আমার মুখের সামনের দিক ক্ষয় করে ফেলব।
তাহক্বীকৃ :
হাদীছটি যঈফ। উক্ত বর্ণনার সনদে অনেক এটি রয়েছে। ওছমান ইবনু আবীল আতেকা নামক একজন রাবী রয়েছে।
ইমাম আহমাদ, ইবনু মাঈন এবং নাসাঈ তাকে যঈফ বলেছেন।এছাড়াও আলী ইবনু যায়েদ আবু আব্দিল মালেক নামের একজন রাবী রয়েছে।
ইমাম বুখারী তাকে মুনকার বলেছেন। ইবনু হাতেম এই হাদীছকে যঈফ বলেছেন।
(ছ) আবু আইয়ুব (রাঃ) বলেন, রাসূলুলাহ (ছাঃ) বলেছেন, চারটি বিষয় নবীদের সুন্নাত।
(ক) লজ্জা করা। অন্য বর্ণনায় খাতনা করার কথা রয়েছে।
(খ) সুগন্ধি ব্যবহার করা
(গ) মিসওয়াক করা ও
(ঘ) বিবাহ করা।
৬৭. যঈফ ইবনু মাজাহ হা/২৮৯, পৃঃ ২৫; আহমাদ হা/২২৩২৩; তৃবারাণী কাবীর হা/৭৭৯৬; মিশকাত হা/৩৮৬, পৃঃ ৪৫; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৩৫৬, ২/৭৫ পৃঃ; মুখাব হাদীস, পৃঃ ২৯৮।
৬৮.মুগাল্লাত্বঈ, শরহে সুনানে ইবনে মাজাহ (সউদী আরব : মাকতাবাহ নিযার মুছফা আল-বায, ১৪১৯ হিঃ), ১/৬২ পৃঃ।
৬৯. যঈফ তিরমিযী হা/১০৮০, ১/২০৬; মিশকাত হা/৩৮২, পৃঃ ৪৪; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৩৫২, ২/৭৪ পৃঃ, ‘মিসওয়াক করা’ অনুচ্ছেদ; মুড়খাব হাদীস, পৃঃ ২৯৭।
তাহক্বীকৃ :
বর্ণনাটি
যঈফ। উক্ত বর্ণনায় কয়েকটি ত্র“টি রয়েছে। আইয়ুব ও
মাকহুলের মাঝে রাবী বাদ পড়েছে। হাজ্জাজ বিন আরতৃহ নামক রাবীর দোষ রয়েছে। এছাড়াও
এর সনদে আবু শিমাল রয়েছে। তাকে আবু যুর'আহ ও
ইবনু হাজার আসকালানী অপরিচিত বলেছেন।
পাঠকের সুবিধাথে অল্প কিছু লেখা দিয়েছি। তাতে আপনাদের পড়তে সুবিধা হবে।
চলবে...........
Post a Comment