বিসমিল্লাহির
রহমানির রহিম
পবিত্রতা
(ওযূ ও তায়াম্মুম)
(২) যায়তুন দ্বারা মিসওয়াক করা ফযীলতপূর্ণ :
যায়তুন দ্বারা মিসওয়াক করার জন্য উৎসাহ প্রদান করা হয় এবং বিশেষ গুরত্ব বর্ণনা করা হয়। অথচ এর পক্ষে শারঈ কোন বিধান নেই। এ মর্মে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তা জাল।
৭০. মুহাম্মাদ নাছিরদ্দীন আলবানী, ইরওয়াউল গালীল ফী তাখরীজে আহাদীছি মানারিস
সাবীল (বৈরত : আল-মাকতাবুল ইসলামী, ১৪০৫/১৯৮৫), হা/৭৫, ১ম খ, পৃঃ ১১৭।
(ক) মু'আয বিন জাবাল বলেন,রাসূলুল্লাহ(সা.)বলেছেন, উত্তম মিসওয়াক হল বরকতপূর্ণ যায়তুন গাছ,যা মুখকে পবিত্র করে ও দাঁতের আবরণ দূর করে। এটা আমার মিসওয়াক ও আমার পূর্বের নবীগণের মিসওয়াক।
তাহক্বীকৃ :
বর্ণনাটি জাল। উক্ত বর্ণনার সনদে মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক্ব আলউকাশী নামে একজন মিথুক রাবী আছে।
ইমাম যাহাবী, দারাকুত্নী, ইবনু হাজার আসক্বালানী সহ অন্যান্য মুহাদ্দিছও তাকে মিথুক বলে অভিহিত করেছেন।
ইমাম হায়ছামী বলেন, এর সনদে মুহাম্মাদ ইবনু
মুহছিন উকাশীও আছে। সে চরম মিথ্যাবাদী।
(খ) আবু খায়রাহ ছব্বাহী (রাঃ) বলেন, আমি আব্দুল কায়স প্রতিনিধি দলের সাথে ছিলাম, যারা রাসূলুল্লাহ(সা.)-এর কাছে গিয়েছিল।
তিনি পাথেয় বাবদ মিসওয়াক করার জন্য আমাদেরকে আরাক গাছের ডাল দিলেন, যাতে আমরা তা দ্বারা মিসওয়াক করি।
আমরা বললাম, আমাদের নিকট মিসওয়াক করার জন্য খেজুরের ডাল রয়েছে। তবে আমরা আপনার সম্মানজনক দান গ্রহণ করছি।
তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, হে আলণ্ডাহ! আব্দুল কায়েসের প্রতিনিধি দলকে ক্ষমা করন। কারণ তারা আনুগত্য স্বীকার করে ইসলাম গ্রহণ করেছে, অসন্তুষ্টিতে নয়।
আর আমার সম্প্রদায় অপমানিত ও তীর-ধনুকের কবলে না পড়ে ইসলাম গ্রহণ করেনি।
৭১. ত্বাবারাণী, আল-আওসাত্ব, হা/৬৮৯।
৭২.
আহমাদ ইবনু আলী ইবনু হাজার আল-আসক্বালানী, তাহযীবুত তাহযীব (বৈরত : | দারল কুতুব আল-ইলমিয়াহ, ১৪১৫/১৯৯৪), ৯/৩৭১ পৃঃ।
৭৩.
সিলসিলা যঈফাহ হা/৫৩৬০ ও ৫৫৭০। ৭৪. ত্বাবারাণী কাবীর হা/১৮৩৫৯; মুখাব হাদীস, পৃঃ ৩০০।
তাহক্বীকৃ :
হাদীছটি যঈফ। এর সনদে দাউদ ইবনু মাসাওয়ার নামক রাবী রয়েছে। সে
অপরিচিত, কেউ তাকে নির্ভরযােগ্য বলেননি। তার শিক্ষক মুকৃাতিল বিন হুমামও
অপরিচিত।
(৩) আঙ্গুল দিয়ে মিসওয়াক করাই যথেষ্ট :
মিসওয়াক দ্বারাই মুখ পরিষ্কার করা সুন্নাত। মিসওয়াক না থাকলে
আঙ্গুল দ্বারা মিসওয়াক করা যায়। কিন্তু শুধু আঙ্গুল দ্বারা মিসওয়াক করাই যথেষ্ট, একথা ঠিক
নয়। এর পক্ষে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তা জাল।
আনাস(রাঃ)রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, আঙ্গুল দ্বারা মিসওয়াক করাই যথেষ্ট
৭৫. ইমাম বুখারী, তারীখুল কাবীর ৩/২৪৭ পৃঃ।
৭৬. বায়হাক্বী ১/৪০, ইবনু আদী ৫/৩৩৪।
তাহক্বীকৃ :
বর্ণনাটি
যঈফ। এর সনদে আবু গাযিয়া নামক একজন রাবী রয়েছে। সে মুহাদ্দিছগণের ঐকমত্যে যঈফ।
বরং দারাকুনী তাকে হাদীছ জালকারী বলে অভিযুক্ত করেছেন। এছাড়াও কাছীর ইবনু
আব্দুলণ্টাহ আলমুযানী নামক রাবীকেও মুহাদ্দিছগণ মিথুক বলেছেন। তাছাড়া আরাে অনেক
ত্রুটি রয়েছে।
(৪) ছিয়াম অবস্থায় কাঁচা ডাল দ্বারা মিসওয়াক না করা :
উক্ত ধারণা সম্পূর্ণ ভ্রাড়। বরং কাঁচা হােক শুকনা হােক যেকোন ডাল দ্বারা মিসওয়াক করা যাবে।
উলেণ্টখ্য, তাবলীগ জামাআতের ‘ফাযায়েলে আমল’ বইয়ে বলা হয়েছে, ওলামায়ে কেরাম বলেছেন, মিসওয়াকের এহতেমাম করার মধ্যে সত্তরটি উপকার রয়েছে।
তার মধ্যে একটি মৃত্যুর সময় কালেমায়ে শাহাদত
নসীব হয়। উক্ত দাবী উদ্ভট ও ভিত্তিহীন। এভাবে শরী'আতকে হেই প্রতিপন্ন করা হয়েছে।
মিসওয়াক সম্পর্কে ছহীহ হাদীছ :
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ(সা.)বলেন, ‘মিসওয়াক হল মুখ পরিষ্কারকারী এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের কারণ।
৭৭. সিলসিলা যঈফাহ হা/২৪৭১;ইরওয়াউল গালীল হা/৬৯; যঈফুল জামে হা/৬৪১৫।
৭৮.
ছহীহ বুখারী হা/১৯৩৪,
১/২৫৯ পৃঃ, ছিয়াম’ অধ্যায়-৩৬, অনুচ্ছেদ-২৭-
৭৯.
ফাযায়েলে নামায অংশ,
৬৯ পৃঃ।
৮০.
ছহীহ নাসাঈ হা/৫,
১/৩ পৃঃ; মিশকাত হা/৩৮১, পৃঃ ৪৪; বঙ্গানুবাদ হা/৩৫১, ২/৭৪ পৃঃ; ইরওয়া হা/৬৬।
আলী (রাঃ) মিসওয়াক করার নির্দেশ দান করতেন এবং বলতেন,রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “নিশ্চয় বান্দা যখন মিসওয়াক করে ছালাত আদায়ের জন্য দাঁড়ায়, তখন ফেরেশতা তার পিছনে দাঁড়ায়।
অতঃপর তার ক্বিরাআত শুনতে থাকে এবং তার কিংবা তার কথার নিকটবর্তী হয়। এমনকি ফেরেশতার মুখ তার মুখের উপর রাখে।
তার মুখ থেকে কুরআনের যা বের হয়, তা ফেরেশতার পেটের মাঝে প্রবেশ করে। সুতরাং তোমরা কুরআন তেলাওয়াতের জন্য মুখ পরিষ্কার রাখ’ ।
উলেণ্টখ্য, মিসওয়াকের গুরত্ব সম্পর্কে আরো অনেক হাদীছ রয়েছে।।
পাঠকের সুবিধাথে অল্প কিছু লেখা দিয়েছি। তাতে আপনাদের পড়তে সুবিধা হবে।
চলবে...........
Post a Comment