বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
পবিত্রতা (ওযূ ও তায়াম্মুম)
(৩১) ঋতুবতী বা অপবিত্র ব্যক্তিদেরকে সাধারণ কাজকর্ম করতে নিষেধ করা :
অপবিত্র
ব্যক্তি সালাম-মুছাফাহা করতে পারে না, কোন বিশেষ পাত্র স্পর্শ করতে পারে না ও
স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারে না বলে যে কথা সমাজে প্রচলিত আছে, তা কুসংস্কার মাত্র।
কারণ তারা স্বাভাবিকভাবে সাধারণ কাজকর্ম করতে পারে।উল্লেখ্য যে, অপবিত্র ব্যক্তি বা
ঋতুবতী মহিলা কুরআন স্পর্শ না করে যিকির হিসাবে কোন অংশ মুখস্থ তেলাওয়াত করতে
পারে।
তবে পবিত্র ও ওযূ অবস্থায় পাঠ করা উচিত। এটাই উত্তম।কুরআন মুখস্থও পড়া যাবে যে সমবর্ণনা রয়েছে তা ত্র“টিপূর্ণ। যেমন:
(ক) ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, ঋতুবতী এবং অপবিত্র ব্যক্তি কুরআনের কোন অংশ পড়তে পারবে না।
তাহক্বীকৃ :
হাদীছটি মুনকার। ইমাম তিরমিযী বলেন, আমি ইমাম বুখারীকে বলতে শুনেছি, ইসমাঈল বিন আইয়াশ হিজায ও ইরাকের অধিবাসীদের থেকে বর্ণনা করেছে। তার হাদিসগুলো মুনকার। সে যঈফ হাদীছ বর্ণনা করেছে।
(খ) আলী (রাঃ) বলেন, রাসূল (সা.) অপবিত্র না থাকলে প্রত্যেক অবস্থাতেই তিনি আমাদের কুরআন পড়াতেন।
তাহক্বীকৃ :
হাদীছটি যঈফ। এর সনদে আবদুল্লাহ ইবনু সালামাহ নামে একজন দুর্বল রাবী আছে।
(গ) আলী (রাঃ) বলেন, রাসূল (সা.) পায়খানা হতে বের হয়ে আমাদেরকে
কুরআন পড়াতেন এবং আমাদের সাথে গোশত খেতেন।
অপবিত্রতা ছাড়া কুরআন হতে তাঁকে কোন কিছু বাধা দিতে পারত না।
তাহক্বীকৃ :
হাদীছটি যঈফ। এর সনদেও আবদুল্লাহ ইবনু সালামাহ নামে একজন দুর্বল রাবী আছে।
১৯৫. ইবনু মাজাহ হা/৫৯৮, পৃঃ ৪৪, ‘পবিত্রতা অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১০৬।
১৯৬. যঈফ ইবনে মাজাহ হা/৫৯৮।
১৯৭. সিলসিলা যঈফাহ হা/৩৮০১, ৮/২৭২।
১৯৮. ছহীহ বুখারী হা/২৮৩, (ইফাবা হা/২৭৯, ১/১৫৯ পৃঃ), ‘গােসল’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ
২৩; ছহীহ মুসলিম হা/৮৫০; মিশকাত হা/৪৫১, পৃঃ ৪৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত
হা/৪২৩, ২/১০৫ পৃঃ, ‘পবিত্রতা অধ্যায়, ‘নাপাক ব্যক্তির সাথে মিলামিশা’ অনুচ্ছেদ।
১৯৯. ছহীহ বুখারী হা/৩০৫ ও ৩০৬, ১/৪৪ পৃঃ, (ইফাবা হা/২৯৯, ১/১৬৯-১৭০ পৃঃ),
‘ঋতু’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৭; মুসলিম হা/৮৫২, ১/১৬২ পৃঃ, (ইফাবা হা/৭১০), ‘ঋতু’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৩০; সূরা হিজর, আয়াত-৯; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৪০৬;
মুওয়াত্তা মালেক হা/৪৬৯, সনদ ছহীহ, ইরওয়াউল গালীল হা/১২২, ১/১৬১ পৃঃ।
২০০. আবুদাউদ হা/১৭, ১/৪ পৃঃ; সনদ ছহীহ, সিলসিলা ছহীহাহ হা/৮৩৪; মিশকাত হা/৪৬৭, পৃঃ ৫০; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৪৩৮, ২/১১০ পৃঃ, ‘নাপাক ব্যক্তির সাথে মিলামিশা’ অনুচ্ছেদ; শায়খ বিন বায, মাজমূউ ফাতাওয়া ২৬/৯৯; ফাতাওয়া
উছায়মীন।
২০১. তিরমিযী হা/১৩১; মিশকাত হা/৪৬১; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৪৩২, ২/১০৮। ২০২. -যঈফ তিরমিযী হা/১৩১।
(৩২) পবিত্রতা সম্পর্কে প্রসিদ্ধ কয়েকটি যঈফ ও জাল হাদীছ :
নিম্নে কয়েকটি বর্ণনা পেশ করা হল, যেগুলো মানুষের মুখে মুখে খুবই প্রচলিত। অথচ তা যঈফ ও জাল বর্ণনা। এ সমস্তু বর্ণনা প্রচার করা উচিত নয়।।
(ক) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (ছাঃ) যখন টয়লেটে প্রবেশ করতেন তখন আংটি খুলে রাখতেন।
তাহক্বীকৃ :
হাদীছটি মুনকার ও যঈফ। ইমাম আবুদাউদ বলেন, “এই হাদীছ মুনকার বা অগ্রহণযোগ্য।
(খ) ঈসা ইবনু ইয়াযদাদ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ পেশাব করে তখন সে যেন পুরষাঙ্গ তিনবার ঝেড়ে নেয়।
তাহক্বীকৃ :
হাদীছটি
যঈফ। এর সনদে যামআহ ইবনু ছালেহ আল-জুনদী ও ঈসা ইবনু ইয়াযদাদ নামক দুইজন দুর্বল
রাবী আছে।
উল্লেখ যে, উক্ত বর্ণনার মধ্যে অনেকে পেশাব করার পর নাচানাচির দলীল খুঁজেন, যা মূর্খতা ছাড়া কিছু নয়।
(গ) আবু রাফে (রাঃ) বলেন, রাসূল (সা.) যখন সালাতের জন্য ওযূ করতেন, তখন আপন আঙ্গুলে পরিহিত আংটিকে নেড়ে দিতেন।
তাহক্বীকৃ :
হাদীছটি যঈফ। এর সনদে মামার ও তার পিতা মুহাম্মাদ ইবনু উবায়দুলণ্টাহ নামে দুইজন দুর্বল রাবী আছে।
(ঘ) আয়েশা (রাঃ) বলেন, একদা রাসূল (সা.) বললেন, এই সকল ঘরের দরজা
মসজিদের দিক হতে (অন্য দিকে) ফিরিয়ে দাও।
কারণ আমি মসজিদকে ঋতুবতী ও নাপাক ব্যক্তির জন্য জায়েয মনে করি না।
তাহক্বীকৃ:
হাদীছটি যঈফ। এর সনদে জাসরা বিনতে দিজাজা নামক একজন বর্ণনাকারী আছে। সে অত্যধিক ত্রুটিপূর্ণ।
(ঙ) আলী (রাঃ) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, (রহমতের) ঐ ঘরে ফেরেশতা প্রবেশ করে না, যাতে কোন ছবি রয়েছে অথবা কুকুর বা নাপাক ব্যক্তি রয়েছে।
তাহক্বীকৃ :
হাদীছটি যঈফ। তবে হাদীছের প্রথমাংশ ছহীহ। কারণ যে ঘরে প্রাণীর ছবি, মূর্তি থাকে এবং কুকুর থাকে সে ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না মর্মে ছহীহ হাদীছ রয়েছে।
২০৩. আহমাদ, আবুদাউদ, তিরমিযী, ইবনু হিব্বান, বুলুগুল মারাম হা/১০০।
২০৪. যঈফ তিরমিযী হা/১৪৬।
২০৫. ইরওয়াউল গালীল ২/২৪১ পৃঃ।
২০৬. আবুদাউদ হা/২২৯; নাসাঈ হা/২৬৫; মিশকাত হা/৪৬০, পৃঃ ৪৯; বঙ্গানুবাদ
মিশকাত হা/৪৩১, ২/১০৭।
২০৭. ইরওয়াউল গালীল হা/৪৮৫, ২/২৪১ পৃঃ।
২০৮. আবুদাঊদ হা/১৯; তিরমিযী হা/১৭৪৬; নাসাঈ হা/৫২১৩; মিশকাত হা/৩৪৩;
| বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৩১৬, ২/৬২।
২০৯. যঈফ আবুদাউদ হা/১৯ -• " ।
২১০. ইবনু মাজাহ হা/৩২৬, পৃঃ ২৮; বুলুগুল মারাম হা/৯০।
২১১. তাহক্বীক মুসনাদ হা/১৯০৭৬; যঈফ ইবনু মাজাহ হা/৩২৬; সিলসিলা যঈফাহ হা/১৬২১।
২১২. দারাকুত্নী ১/৯৪; ইবনু মাজাহ হা/৪৪৯; মিশকাত হা/৪২৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৩৯৫।।
২১৩. যঈফ ইবনু মাজাহ হা/৪৪৯; যঈফুল জামে' হা/৪৩৬১।।
২১৪. আবুদাউদ হা/২৩২; মিশকাত হা/৪৬২; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৪৩৩, ২/১০৮ পৃঃ।
২১৫. -যঈফ আবুদাউদ হা/২৩২; ইরওয়াউল গালীল হা/১২৪, ১৯৩, ৯৬৮।
২১৬. আবুদাউদ হা/২২৭, ৪১৫২; নাসাঈ হা/২৬১; মিশকাত হা/৪৬৩; বঙ্গানুবাদ
মিশকাত হা/৪৩৪, ২/১০৮।
২১৭. যঈফ আবুদাউদ হা/২২৭; মিশকাতে বর্ণিত যঈফ ও জাল হাদীছ সমূহ হা/১১২, ১/৬৩ পৃঃ।।
২১৮. ছহীহ বুখারী হা/৩২২৭, ৩২২৪, ৩২২৫, ১ম খ-, পৃঃ ৪৫৮, ‘সৃষ্টির সূচনা
অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৭; মিশকাত হা/৪৪৮৯, পৃঃ ৩৮৫।
২১৯. ইবনু মাজাহ হা/৬৬৪; মিশকাত হা/৪৪৯।
পাঠকের সুবিধাথে অল্প কিছু লেখা দিয়েছি। তাতে আপনাদের পড়তে সুবিধা হবে।
চলবে...........
إرسال تعليق