বিসমিল্লাহির রহমানির
রহিম
জামা‘আত ও ইমামতি
(২) ফযীলতের আশায় মাথায় পাগড়ী বাঁধা :
ফযীলত মনে করে সালাতের সময় পাগড়ী বাঁধার কোন ছহীহ হাদীছ নেই। এর পক্ষে যে
সমস্ত বর্ণনা প্রচলিত আছে, সেগুলো সবই জাল।
(ক) জাবের (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, পাগড়ী পরে দুই রাক‘আত সালাত
পড়া পাগড়ী বিহীন সত্তর রাক‘আত সালাত পড়ার চেয়েও উত্তম।
তাহকবীক্ব :
বর্ণনাটি জাল। এর সনদে আহমাদ ইবনু ছালেহ নামে একজন মিথ্যুক রাবী আছে। সে
হাদীছ জাল করত।
(খ) আনাস (রাঃ) বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন, পাগড়ী পরে সালাত আদায় করা দশ
হাযার নেকীর সমপরিমাণ।
তাহক্বীক্ব :
বর্ণনাটি জাল। উক্ত বর্ণনার সনদে আবান ও ইবনু আর্রাক নামে দুইজন মিথ্যুক রাবী
আছে।
(গ) ইবনু ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন, পাগড়ী পরে সালাত আদায় করা
পাগড়ী বিহীন পঁচিশ ওয়াক্ত সালাত আদায়ের সমান,
পাগড়ী পরে এক জুম‘আ আদায় করা সত্তর জুম‘আ আদায়ের সমান। জুম‘আর দিনে
ফেরেশতাগণ পাগড়ী পরিহিত ব্যক্তিদের নিকট উপস্থিত হন এবং সূর্যাস্ত পর্যন্ত তাদের জন্য
দু‘আ করেন।
তাহক্বীক্ব :
বর্ণনাটি জাল। এর সনদে আব্বাস ইবনু কাছীর নামে মিথ্যুক রাবী আছে। ইবনু হাজার
আসক্বালানী বলেন, বর্ণনাটি জাল।
(ঘ) আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহর এমন কিছু ফেরেশতা
আছেন, যারা জুম‘আর দিনে জামে মসজিদের দরজায় নিযুক্ত থাকেন।
তারা সাদা পাগড়ী পরিহিত ব্যক্তিদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
তাহক্বীক্ব :
বর্ণনাটি জাল। এর সনদে ইয়াহ্ইয়া বিন শাবীব নামে মিথ্যুক রাবী
আছে।
(ঙ) আবু দারদা (রাঃ) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা ও
ফেরেশতামন্ডলী
জুম‘আর দিনে পাগড়ী পরিহিত
ব্যক্তিদের উপর রহমত বর্ষণ করেন।
তাহক্বীক্ব :
বর্ণনাটি জাল বা মিথ্যা। উক্ত বর্ণনার সনদে আইয়ূব ইবনু মুদরাক নামে মিথ্যুক রাবী
রয়েছে।
(চ) ত্বালহা বিন ইয়াযীদ বিন রুকানা তার পিতা হতে দাদার সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসূল
(সা.) বলেছেন, আমার উম্মত ততদিন ফিৎরাতের উপর থাকবে, যত দিন তারা টুপির
উপর পাগড়ী পরবে।
তাহক্বীক্ব :
হাদীছটি জাল। এর সনদে মুহাম্মাদ বিন ইউনুস আল-কুদাইমী নামে একজন মিথ্যুক রাবী
আছে। এছাড়া আরো দুইজন রাবী দুর্বল রয়েছে।
(ছ) রুকানা (রাঃ) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, টুপির উপর পাগড়ী পরিধান করা
মুসলিম ও মুশরিকদের মাঝে পার্থক্য। ক্বিয়ামতের দিন পাগড়ীর প্রত্যেক পাক তার মাথার
উপর জ্যোতি স্বরূপ ঘুরবে।
তাহক্বীক্ব :
বর্ণনাটি বাতিল।
(জ) রুকানা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল (সা.)-কে বলতে শুনেছি,
আমাদের ও মুশরিকদের
মাঝের পার্থক্য হল- টুপির উপর পাগড়ী পরিধান করা।
তাহক্বীক্ব :
হাদীছটি যঈফ। ইমাম তিরমিযী বলেন,এই হাদীছ দুর্বল। এর সনদ ভিত্তিশীল নয়। আমরা
আবুল হাসান আসক্বালানীকেও চিনি না এবং ইবনু রুকানাকেও চিনি না। ইমাম মিযযী
বলেন, এর সনদে আবু জা‘ফর নামে একজন অপরিচিত
রাবী আছে।
(ঝ) আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন, নিশ্চয় মহান আল্লাহ আমাকে বদর ও
হুনাইনের যুদ্ধের দিন ঐ সমস্ত ফেরেশতা দ্বারা সাহায্য করেছেন, যারা পাগড়ী পরিহিত
অবস্থায় ছিলেন। নিশ্চয় এই পাগড়ী কুফর ও ঈমানের মাঝের প্রাচীর।
তাহক্বীক্ব :
বর্ণনাটি নিতান্তই যঈফ। এর সনদে আশ‘আছ বিন সাঈদ এবং আব্দুল্লাহ বিন বুসর নামে
দুইজন ত্রুটিপূর্ণ রাবী আছে।
(ঞ) যে ব্যক্তি পাগড়ী পরিধান করবে, তার প্রত্যেক পাকে একটি করে নেকী হবে। আর
যে পাক কম করে দিবে তার জন্য কমিয়ে দেয়া প্রত্যেক পাকে পাপ হবে।
তাহক্বীক্ব :
বর্ণনাটি জাল। উল্লেখ্য যে, উক্ত মর্মে আরো অনেক
জাল হাদীছ প্রচলিত আছে।
সুধী পাঠক! উক্ত জাল বর্ণনাগুলোর কারণেই আজ সমাজে পাগড়ী প্রথা চালু আছে। মিথ্যা
ফযীলতের ধোঁকায় পড়ে অসংখ্য মানুষ লম্বা লম্বা পাগড়ী পরাকে অধিক গুরুত্ব দেয়।
সচেতন ব্যক্তিদেরকে এই প্রতারণা থেকে সাবধান থাকতে হবে। উল্লেখ যে, উক্ত ফযীলতের
আশা না করে কেউ চাইলে মাথায় পাগড়ী বা রূমাল ব্যবহার করতে পারে। তবে তা শুধু
সালাতের সাথে
সম্পৃক্ত নয়।
৬০২. সিলসিলা যঈফাহ হা/৫৬৯৯, ১২/৪৪৬ পৃঃ।
৬০৩. সিলসিলা যঈফাহ হা/৫৬৯৯, ১২/৪৪৬ পৃঃ ।
৬০৪. সিলসিলা যঈফাহ হা/১২৯।
৬০৫. সিলসিলা যঈফাহ হা/১২৯।
৬০৬. সিলসিলা যঈফাহ হা/১২৭, ১/২৪৯ পৃঃ।
৬০৭. সিলসিলা যঈফাহ হা/১২৭-এর আলোচনা দ্রঃ।
৬০৮. লিসানুল মীযান ৩/২৪৪ পৃঃ-
৬০৯. সুয়ূত্বী, আল-ফাতাওয়া ১/৫৮ পৃঃ; সিলসিলা যঈফাহ হা/৩৯৫।
৬১০. সিলসিলা যঈফাহ হা/৩৯৫-এর আলোচনা দ্রঃ।
৬১১. আবু নু‘আইম,
আল-হিলইয়া ৫/১৮৯-১৯০
পৃঃ; ত্বাবারাণী, আল-কাবীর, সিলসিলা যঈফাহ হা/১৫৯।
৬১২. ইবনুল জাওযী, কিতাবুল মাওযূ‘আত ২/১০৫ পৃঃ; সিলসিলা যঈফাহ হা/১৫৯।
৬১৩. দায়লামী ৩/১৭৫ পৃঃ; সিলসিলা যঈফাহ হা/৬০৭২।
৬১৪. সিলসিলা যঈফাহ হা/৬০৭২-এর আলোচনা দ্রঃ।
৬১৫. বাওয়ারদী, সিলসিলা যঈফাহ হা/১২১৭।
৬১৬. সিলসিলা যঈফাহ হা/১২১৭, ৩/৩৬২ পৃঃ।
৬১৭. তিরমিযী হা/১৭৮৪, ১/৩০৮ পৃঃ, ‘পোশাক’ অধ্যায়; মিশকাত হা/৪৩৪০; সিলসিলা যঈফাহ হা/৬০৭২।
৬১৮. সিলসিলা যঈফাহ হা/৬০৭২।
৬১৯. মুসনাদে ত্বায়ালিসী হা/১৫৪; সিলসিলা যঈফাহ হা/৩০৫২।
পাঠকের সুবিধাথে অল্প কিছু লেখা দিয়েছি। তাতে আপনাদের পড়তে সুবিধা হবে।
চলবে...........
إرسال تعليق