বিসমিল্লাহির রহমানির
রহিম
সালাতের সময়
(৩) আছরের সালাতের ওয়াক্ত :
আছরের সালাত দেরী করে পড়ার যে প্রথা সমাজে চালু আছে তার ছহীহ কোন ভিত্তি
নেই।এর পক্ষে যে সমস্ত বর্ণনা প্রচলিত আছে সেগুলো
সবই যঈফ ও জাল।
(ক)আব্দুল ওয়াহেদ ইবনু রাফে‘ বলেন, আমি একদা মসজিদে প্রবেশ করলাম। তখন
মুওয়াযযিন আছরের আযান দিল।
রাবী বলেন, তখন এক বৃদ্ধ মসজিদে বসেছিলেন।তাই মুয়াযযিন তার নিকটে আসল। তখন
তিনি বললেন, আমার আব্বা আমাকে বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) আছরের সালাত দেরী
করে পড়ার নির্দেশ দিতেন।
তহক্বীক্ব :
বর্ণনাটি যঈফ।ইমাম দারাকুৎনী বলেন, এর সনদে আব্দুল্লাহ বিন রাফে‘ বিন খাদীজ বিন
রাফে‘ নামে একজন রাবী আছে।
সে নির্ভরযোগ্য নয়।অন্যত্র তিনি বলেন, এই হাদীছের সনদ যঈফ।রাফে‘ সহ অন্য কোন
ছাহাবী থেকে এই হাদীছ ছহীহ হিসাবে প্রমাণিত হয়নি।
(খ) ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি একদা প্রশাসকদের নিকট পত্র লিখলেন
যে, আমার নিকট আপনাদের সমস্ত কাজের মধ্যে সালাতই অধিক গুরুত্বপূর্ণ।
যে ব্যক্তি তার হেফাযত করে এবং যথাযথভাবে তার উপর অটল থাকে, সে তার দ্বীনকে
রক্ষা করে।
আর যে তাকে বিনষ্ট করে সে তা ব্যতীত অন্যগুলোকে আরো অধিক বিনষ্টকারী।
অতঃপর তিনি লিখলেন, যোহর আদায় করবে যখন ছায়া এক হাত হবে, তোমাদের প্রত্যেকের
ছায়া তার সমান হওয়া পর্যন্ত।
আছর আদায় করবে যখন সূর্য উচ্চে পরিষ্কার সাদা অবস্থায় থাকবে, যাতে একজন
ভ্রমণকারী ব্যক্তি সূর্য অদৃশ্য হবার পূর্বেই দুই বা তিন মাইল অতিক্রম করতে পারে।
যখনই সূর্য ডুবে যাবে তখনই মাগরিব আদায় করবে। যখন লালিমা ডুবে যাবে তখন
এশা আদায় করবে, রাত্রের এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত।
এর পূর্বে যে ঘুমাবে তার চক্ষু না ঘুমাক। এ কথা তিনি তিনবার লিখেছিলেন। আর ফজর
আদায়
করবে যখন তারকারাজি পরিষ্কার হয় এবং চমকে।
মূলতঃ
উক্ত হাদীছে যোহর, আছর ও মাগরিবের সালাতের সময়কে ছহীহ হাদীছের বিরোধী হিসাবে
পেশ করা হয়েছে।
বিশষ
করে আছরের সময়। কারণ ছহীহ হাদীছে চার মাইলের কথা এসেছে।
তাহক্বীক্ব :
যঈফ। এর সনদ বিচ্ছিন্ন। কারণ নাফে‘ ওমর (রাঃ)-এর যুগ পাননি।
(গ) যিয়াদ বিন আব্দুল্লাহ নাখঈ বলেন, আমরা একদা আলী (রাঃ)-এর সাথে বড়
মসজিদে বসেছিলাম।
কূফাতে সে সময় অনেক কুঁড়ে ঘর ছিল। অতঃপর মুওয়াযযিন এসে বলল, হে আমীরুল
মুমিনীন! আছরের সালাত আদায় করতে হবে।
তিনি বলেন, তুমি বস। তাই সে বসল। মুয়াযযিন পুনরায় ফিরে এসে একই কথা বলল।
তখন আলী (রাঃ) বললেন, এই কুকুরটি আমাদেরকে সুন্নাত শিক্ষা দিতে চাচ্ছে!
অতঃপর তিনি দাঁড়ালেন এবং আমাদেরকে নিয়ে আছরের সালাত আদায় করলেন। তারপর
সালাত থেকে ফিরে ঐ স্থানে ফিরে আসলাম যেখানে আমরা বসেছিলাম।
অতঃপর সূর্য ডুবে যাওয়ার কারণে আমরা সওয়ারীর উপর হাঁটু গেড়ে বসে গেলাম।
তাহক্বীক্ব :
সনদ যঈফ। হাকেম একে ছহীহ বলে উল্লেখ করলেও তা যঈফ। ইমাম দারাকুৎনী এর
ত্রুটি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, যিয়াদ বিন আব্দুল্লাহ নাখঈ অপরিচিত।
আব্বাস বিন যুরাইহ ছাড়া অন্য কেউ তার থেকে হাদীছ বর্ণনা করেননি। মূলতঃ আলী
(রাঃ)-এর নামে উক্ত বর্ণনা পেশ করে আছরের সালাত বিলম্ব করার প্রতি উৎসাহিত
করা হয়।
(ঘ) ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে
বর্ণিত, তিনি আছরের সালাত দেরী
করে আদায় করতেন।
তাহক্বীক্ব :
বর্ণনাটি যঈফ। এর সনদে আবু ইসহাক্ব নামে ত্রুটিপূর্ণ রাবী আছে। সে আব্দুর রহমান
ইবনু ইয়াযীদ থেকে সঠিকভাবে হাদীছ বর্ণনা
করেনি।
(ঙ) ইয়াযীদ ইবনু আব্দুর রহমান তার পিতা থেকে দাদার সূত্রে বর্ণনা করেন যে, আমরা
মদ্বীনায় রাসূল (সা.)-এর নিকট গেলাম। তিনি সূর্য উজ্জ্বল ও পরিষ্কার থাকা পর্যন্ত
আছরের সালাত দেরী করতেন।
তাহক্বীক্ব :
হাদীছটি যঈফ। উক্ত হাদীছের সনদে মুহাম্মাদ ইবনু ইয়াযীদ আল-ইয়ামামী ও ইয়াযীদ
ইবনু আব্দুর রহমান নামে দুইজন অপরিচিত রাবী আছে। ইমাম নববী বলেন, বাতিল
হাদীছ।
(চ) আবু আমর বলেন, ঐ সময়টা হল, যখন সূর্যের আলো যমীনে
হলুদ আকারে পড়বে।
তাহক্বীক্ব :
বর্ণনাটি যঈফ। ওয়ালীদ বিন মুসলিম নামে একজন মুদাল্লিস রাবী আছে, তার শ্রবণশক্তি
ভাল ছিল না।
৫০৩. দারাকুৎনী হা/১০০৩, ১/২৫১; ত্বাবারাণী কবীর ৪/২৬৭; ।
৫০৪. তুহফাতুল আহওয়াযী ১/৪২০ পৃঃ, হা/১৫৯; তানক্বীহ, পৃঃ ২৬৫।
৫০৫. দারাকুৎনী ১/২৫১ পৃঃ
৫০৬. -তানকীহুল কালাম, পৃঃ ২৬৫।
৫০৭. মালেক হা/৯; মিশকাত হা/৫৮৫, পৃঃ ৫৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৩৮, ২/১৭১ পৃঃ।
৫০৮. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, বুখারী হা/৫৫০, ১/৭৮ পৃঃ, (ইফাবা হা/৫২৪, ২/১৬ পৃঃ); মিশকাত হা/৫৯২, পৃঃ ৬০; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৪৪, ২/১৭৪ পৃঃ, ‘জলদি ছালাত আদায় করা’ অনুচ্ছেদ।
৫০৯. তাহক্বীক্ব মিশকাত হা/৫৮৫, ১/১৮৬ পৃঃ।
৫১০. দারাকুৎনী ১/২৫১; হাকেম হা/৬৯০, ১/১৯২।
৫১১. তানকীহুল কালাম, পৃঃ ২৬৬।
৫১২. দারাকুৎনী ১/২৫১।
পাঠকের সুবিধাথে অল্প কিছু লেখা দিয়েছি। তাতে আপনাদের পড়তে সুবিধা হবে।
চলবে...........
إرسال تعليق