বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
পবিত্রতা (ওযূ ও তায়াম্মুম)
(১১) ওযূর শুরতে বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম আল-ইসলামু হাকুন, ওয়াল কুফর বাতিলুন, আল-ঈমানু নূরন, ওয়াল কুফর যুলমাতুন দুআ পাঠ করা :
উক্ত
দু'আর প্রমাণে কোন ছহীহ
দলীল নেই। যদিও মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (রহঃ) উক্ত দু'আর সাথে আরো কিছু
বাড়তি কথা যোগ করে তার বইয়ে
উলেখ করেছেন।
কিন্তু কোন প্রমাণ উল্লেখ করেননি। এটা পড়লে সুন্নাতের বিরোধীতা করা
হবে। উক্ত দু'আটি দেশের বিভিন্ন
মসজিদের ওযুখানায় লেখা দেখা যায়।
উক্ত দু'আ হতে বিরত থাকতে হবে । বরং ওযূর শুরুতে শুধু বিসমিল্লাহ’ বলতে হবে।
(১২) প্রতিটি অঙ্গ ধৌত করার সময় পৃথক পৃথক দু'আ পড়া :
ওযূর
প্রত্যেক অঙ্গ ধৌত করার সময় পৃথক পৃথক দুআ পড়তে হবে মর্মে আশরাফ আলী থানভী (রহঃ) উলেখ
করেছেন।
তবে তিনি কোন দলীল পেশ করেননি। অন্য শব্দে একটি জাল হাদীছ বর্ণিত হয়েছে।
হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (রহঃ), পূর্ণাঙ্গ নামায শিক্ষা ও জররী
মাসআলা মাসায়েল’, সংকলনে ও সম্পাদনায়- মাওলানা আজিজুল হক (ঢাকা : মীনা বুক হাউস, ৪৫, বাংলা বাজার, চতুর্থ মুদ্রণ-আগস্ট ২০০৯), পৃঃ ৪২;
উলেশ্লখ্য যে, মাওলানার নামে বহু রকমের সালাত শিক্ষা বইয়ের বাংলা অনুবাদ বাজারে চালু আছে। কোন্টি যে আসল অনুবাদ তা আল্লাহ ভাল জানেন।
রাসূলুল্লাহ
(সা.) বলেন) হে আনাস! তুমি আমার নিকটবর্তী হও, তোমাকে ওযূর মিক্বদার শিক্ষা
দিব। অতঃপর আমি তার নিকটবর্তী
হলাম।
তখন তিনি তাঁর দুই হাত ধৌত করার সময় বললেন, ‘বিসমিল্লাহি ওয়াল আলহামদুলিল্লাহ ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুউওয়াতা ইলণ্টা বিলণ্ডা-হি'।
যখন তিনি ইঞ্জিা করলেন
তখন বললেন,
‘আল্লাহ-হুম্মা হাছিন
ফারজী ওয়া ইয়াসিরলী আমরী’। যখন তিনি ওযু করেন ও নাক ঝাড়েন তখন বললেন, ‘আল্লাহ-হুম্মা লাক্কিনী
হুজ্জাতী ওয়ালা তারহামনী রায়েহাতাল জান্নাতি।
যখন তার মুখমল ধৌত করেন তখন বললেন, ‘আল্লাহ-হুম্মা বাইয়িয
ওয়াজহী ইয়াওমা তাবইয়াম্যু উজুহুওঁ।
যখন তিনি দুই হাত ধৌত করলেন তখন বললেন, ‘আল্লাহ হুম্মা আত্বিনী কিতাবী
ইয়ামানী’। যখন হাত দ্বারা মাসাহ করলেন তখন বললেন, ‘আল্লাহ-হুম্মা আগিছনা
বিরহমাতিকা ওয়া জান্নিবনা আযাবাকা'।
যখন তিনি দুই পা ধৌত করলেন তখন বললেন, ‘আল্লাহ-হুম্মা ছাব্বিত
কৃাদামী ইয়াওমা তাযিলণ্ডু ফীহি আকৃদাম।
অতঃপর তিনি বলেন, হে আনাস! ঐ সত্তার কসম
করে বলছি,
যিনি আমাকে সত্যসহ
প্রেরণ করেছেন,
যে বান্দা ওযু করার
সময় এই দু'আ বলবে, তার আঙ্গুল সমূহের ফাঁক
থেকে যত ফোটা পানি পড়বে তার প্রত্যেক ফোটা দ্বারা আল্লাহ তাআলা একজন করে ফেরেশতা
তৈরি করবেন।
সেই ফেরেশতা সত্তরটি জিহ্বা দ্বারা আল্লাহর তাসবীহ বর্ণনা করবেন। এই ছওয়াব কিয়ামত পর্যড় হতে থাকবে।
১০২. পূর্ণাঙ্গ নামায শিক্ষা, পৃঃ ৪৩।
১০৩. ছহীহ তিরমিযী হা/২৫, ১/১৩ পৃঃ; ছহীহ ইবনে মাজাহ হা/৩৯৭, পৃঃ ৩২, সনদ হাসান।
১০৪. তাযকিরাতুল মাওযূ'আত, পৃঃ ৩২; আল-ফাওয়াইদুল মাজমূ'আহ, পৃঃ ১৩, ‘পবিত্রতা অধ্যায়, হা/৩৩।।
তাহক্বীকৃ :
বর্ণনাটি জাল। এর সনদে উবাদা বিন ছুহাইব ও আহমাদ বিন হাশেমসহ
কয়েকজন মিথুক রাবী রয়েছে।
ইমাম বুখারী, নাসাঈ, দারাকুত্ৰীসহ অন্যান্য মুহাদ্দিছও তাদেরকে পরিত্যক্ত বলেছেন। ইমাম নববী বলেন, এই বর্ণনাটি বাতিল, এর কোন ভিত্তি নেই।
(১৩) ওযূর পানি পাত্রের মধ্যে পড়লে উক্ত পানি দ্বারা ওযু হবে না বলে বিশ্বাস করা :
এটি একটি ভ্রাল্ড ধারণা। আশরাফ আলী থানবী (রহঃ) লিখেছেন, “উঁচ
স্থানে বসবে, যেন ওযূর পানির ছিটা শরীরে আসতে না পারে।
অথচ রাসূলুল্লাহ (সা.)পাত্রের মধ্যে হাত ডুবিয়ে দিতেন আবার বের করতেন। এভাবে তিনি ওযু করতেন।
(১৪)ত্রুটিপূর্ণ কথা বললে ওযু নষ্ট হয়ে যায়। ওযুর সময় কথা বললে ফেরেশতারা রমাল নিয়ে চলে যায় :
ওযুকারীর মাথার উপর চারজন ফেরেশতা রমাল নিয়ে ছায়া করে রাখে। পর
পর চারটি কথা বললে রমাল নিয়ে চলে যায় বলে যে কাহিনী সমাজে প্রচলিত আছে,
তা উদ্ভট, মিথ্যা ও কাল্পনিক। তাছাড়া খারাপ কথা বললে ওযূ নষ্ট হয়ে যায় এ আক্বীদাও ঠিক নয়।
এ মর্মে যে হাদীছ রয়েছে তা জাল।
তাযকিরাতুল মাওযূ'আত, পৃঃ ৩২; আল-ফাওয়াইদুল মাজমূ'আহ, পৃঃ ১৩, ‘পবিত্রতা অধ্যায়,
হা/৩৩।
১০৬. পূর্ণাঙ্গ নামায শিক্ষা, পৃঃ ৪২।।
১০৭. বুখারী হা/১৮৬, ১/৩১ পৃঃ, (ইফাবা হা/১৮৬, ১/১১৯ পৃঃ); ছহীহ মুসলিম
হা/৫৭৮; ১/১২৩ পৃঃ, (ইফাবা হা/৪৪৬); মিশকাত হা/৩৯৪, ৪১১, পৃঃ ৪৫; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৩৬২, ২য় খ, পৃঃ
১০৮. আব্দুর রহমান ইবনু আলী ইবনিল জাওযী, আল-ইলালুল মুতানাহিয়াহ ফিল
আহাদীছিল ওয়াহিয়াহ (বৈরত : দারল কুতুব আল-ইলমিয়াহ, ১৪০৩), হা/৬০৪; দায়লামী ২/১৬০, হা/২৮১৪; ইমাম সুয়ূত্বী, জামিউল আহাদীছ হা/১১৭২৬।
ইবনু
আব্বাস (রাঃ) বলেন,
রাসূলুল্লাহ (সা.)বলেছেন, অপবিত্রতা দুই প্রকার।
জিহ্বার ও লজ্জাস্থানের অপবিত্রতা।
দুইটি এক সমান নয়। লজ্জাস্থানের অপবিত্রতার চেয়ে জিহ্বার অপবিত্রতা বেশী। আর এর কারণে ওযূ করতে হবে।
তাহক্বীকৃ :
হাদীছটি বাতিল।এর সনদে বাক্বিয়াহ নামক রাবী রয়েছে, সে ত্রুটিপূর্ণ। সে দুর্বল রাবীদের নিকট থেকে হাদীছ বর্ণনাকারী। রাসূল (ছাঃ) থেকে উক্ত মর্মে কোন ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়নি।
(১৫) কুলি করার জন্য আলাদা পানি নেওয়া :
সুন্নাত
হল হাতে পানি নিয়ে একই সঙ্গে মুখে ও নাকে পানি দেয়া। রাসূল (সা.) এভাবেই ওযু
করতেন।
তিনি এক অঞ্জলি দ্বারাই
কুলি করেন ও নাক পরিষ্কার করেন।আলাদাভাবে পানি নেওয়ার যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তা
যঈফ।
যেমন,
ত্বলহা (রাঃ) তার পিতার
সূত্রে তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন, আমি যখন রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট গেলাম তখন তিনি ওযু
করছিলেন।
আর পানি তার মুখমল ও দাড়ি থেকে তার বুকে পড়ছিল। অতঃপর আমি তাকে দেখলাম, তিনি কুলি করা ও নাকে পানি দেওয়ার সময় পৃথক করলেন।
তাহক্বীকৃ :
হাদীছটি
যঈফ। এর সনদে লাইছ ও মুছাররফ নামের দু’জন রাবী রয়েছে, যারা ত্রুটিপূর্ণ। এছাড়াও আরো ত্রুটি রয়েছে।
এই হাদীছ যঈফ হওয়ার ব্যাপারে মুহাদ্দিছগণ একমত।শায়খ ছফিউর রহমান মুবারকপুরী (রহঃ) বলেন, তালক বিন মুছাররফের হাদীছ পৃথক করা প্রমাণ করে, কিন্তু তা যঈফ।
পাঠকের সুবিধাথে অল্প কিছু লেখা দিয়েছি। তাতে আপনাদের পড়তে সুবিধা হবে।
চলবে...........
Post a Comment