বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
পবিত্রতা (ওযূ ও তায়াম্মুম)
(১৬) কান মাসাহ করার সময় নতুন পানি নেওয়া :
ওযুতে
কান মাসাহ করার ক্ষেত্রে মাথা ও কান একই সঙ্গে একই পানিতে মাসাহ করবে। ‘অতঃপর রাসূল (সা.) এক
অঞ্জলি পানি নিতেন এবং হাত ঝাড়তেন।
তারপর এর দ্বারা তার মাথা ও কান মাসাহ করতেন।এ
জন্য পৃথকভাবে নতুন পানি নেওয়ার প্রয়োজন নেই।
রাসূল (সা.) বলেন, ‘দুই কান মাথার অর্ভুক্ত। তাছাড়া বায়হাক্কীতেও একই পানিতে মাথা ও কান মাসাহ করার ছহীহ হাদীছ এসেছে।নতুনভাবে পানি নেয়ার হাদীছটি ছহীহ নয়।
১০৯. জাওয়াযকানী, আল-আবাতিল ১/৩৫৩ পৃঃ।
১১০. আল-ইলালুল মুতানাহিয়াহ হা/৬০৪-এর আলোচনা দ্রঃ।
১১১. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, ছহীহ বুখারী হা/১৯১, ১/৩১ পৃঃ, (ইফাবা হা/১৯০, ১/১২১পৃঃ), ওযূ অধ্যায়, ‘এক অঞ্জলি পানি দিয়ে মুখ ও নাক পরিষ্কার করা অনুচ্ছেদ; ছহীহ মুসলিম হা/৫৭৮, ১/১২৩ পৃঃ, (ইফাবা হা/৪৪৬); মিশকাত হা/৩৯৪ ও ৪১২, পৃঃ ৪৫; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৩৬২, ২য় খ2, পৃঃ ৭৭।।
১১২. আবুদাউদ হা/১৩৯, ১/১৮-১৯ পৃঃ; বুলুগুল মারাম হা/৪৯, পৃঃ ১৮।
১১৩. যঈফ আবুদাউদ হা/১৩৯-এর আলোচনা দ্রঃ।
১১৪. শরহে বুলুগুল মারাম, পৃঃ ২৬।
১১৫, ছহীহ আবুদাউদ হা/১৩৭, ১/১৮ পঃ।
১১৬. তিরমিযী হা/৩৭, ১/১৬ পৃঃ; ইবনু মাজাহ হা/৪৪৩ ও ৪৪৪, পৃঃ ৩৫, সনদ ছহীহ;
সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩৬; ইরওয়াউল গালীল হা/৮৪।
১১৭. বায়হাক্বী, আস-সুনানুল কুবরা হা/২৫৬; নাসাঈ, আস-সুনানুল কুবরা হা/১৬১, সনদ ছহীহ।
(ক)আবদুল্লাহ বিন যায়েদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি
রাসূল (সা.)-কে দেখেছেন যে, পানি দ্বারা মাথা মাসাহ করেছেন।
অতঃপর তা ব্যতীত কান। মাসাহ করার জন্য পৃথক পানি নিয়েছেন।
তাহক্বীকৃ :
উক্ত শব্দে বর্ণিত হাদীছ যঈফ। উলেণ্ডখ্য যে, উক্ত বর্ণনার পরে হাদীছটির বিশুদ্ধতা সম্পর্কে ইমাম তিরমিযী ও বায়হাক্বীর যে মন্তব্য ইবনু হাজার আসক্বালানী তুলে ধরেছেন তা মূলতঃ এই হাদীছের ক্ষেত্রে নয়; বরং হাত ধৌত করার পর নতুন করে পানি নিয়ে মাথা ও কান মাসাহ করা সংক্রাড় হাদীছটির ব্যাপারে, যা ছহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে।
তাই আব্দুর রহমান মুবারকপুরী (রহঃ) বলেন, ‘সমালোচনা থেকে মুক্ত এমন কোন মারফু হাদীছ এ ব্যাপারে আছে বলে আমি অবগত নই, যার দ্বারা নতুন পানি নিয়ে কান মাসাহ করা যাবে।
(খ) নাফে বলেন, ইবনু ওমর (রাঃ) যখন ওযূ করতেন, তখন কান মাসাহ করার জন্য দুই আঙ্গুলে পানি নিতেন।
তাহক্বীকৃ :
এ বর্ণনাটিও যঈফ। বায়হাক্বীর মুহাক্কিক মুহাম্মাদ আব্দুল কাদির ‘আতা বলেন, রাসূল (সা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, দুই কান মাথার অন্তর ভুক্ত। সুতরাং ঐ হাদিসগুলো যঈফ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে।
উলেশ্লখ্য যে, ইবনু ওমর (রাঃ)-এর ব্যক্তিগত আমলকে
ইবনুল কাইয়িম ছহীহ বলতে চেয়েছেন। কিন্তু উক্ত ত্রটি থাকার কারণে তা যঈফ।
যেমন
তিনি বলেন, রাসূল (সা.) দুই কান মাসাহ করার জন্য নতুন পানি নিয়েছেন এমন হাদীছ প্রমাণিত হয়নি।
তবে ইবনু ওমর থেকে সেটা ছহীহ হিসাবে বর্ণিত
হয়েছে। শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন, ‘দুই কান
মাসাহ করার জন্য নতুন পানি নেওয়ার প্রয়োজন নেই।
বরং মাথা মাসহের জন্য নেয়া পানির সিক্ততা দিয়েই দুই কান মাসাহ করা জায়েয। অতএব কান মাসাহ করার জন্য নতুন পানি নেওয়ার প্রয়োজন নেই; বরং মাথা ও কান একই সঙ্গে মাসাহ করতে হবে।।
১১৮. বায়হাক্বী, মারেফাতুস সুনান ওয়াল আছার হা/১৯১, ১/২২৯ পৃঃ; বলূগুল মারাম হা/৩৯, পৃঃ ২৩।
১১৯. ছহীহ মুসলিম হা/৫৮২, ১/১২৩ পৃঃ ।
১২০. তুহফাতুল আহওয়াযী ১/১২২ পৃঃ, হা/২৮-এর আলোচনা; বিচ্ছুরিত আলোচনা দ্রঃ সিলসিলা যঈফাহ হা/১০৪৬ ও ৯৯৫; মাজমূউ ফাতাওয়া আলবানী, পৃঃ ৩৬।
১২১. বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/৩১৪; মুওয়াত্ত্বা হা/৯২।
১২২. -ঐ, বায়হাক্বী হা/৩১৭-এর ভাষ্য দ্রঃ।
১২৩. ইমাম শাওকানী, নায়লুল আওত্বার ১/২০০ পৃঃ; বুলুগুল মারাম, পৃঃ ২৩-এর উক্ত হাদীছের ভাষ্য দ্রঃ।
১২৪. সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩৬-এর ভাষ্য দ্রঃ।
জ্ঞাতব্য :
অনেকে কান মাসাহকে ফরয বলেন না। অথচ কানসহ মাথা মাসাহ করা ফরয।
কারণ দুই কান মাথার অর্ভুক্ত।
রাসূল (সা.) বলেন, ‘দুই কান মাথার অর্ভুক্ত। তাছাড়া রাসূল (সা.) একই পানিতে মাথা ও কান মাসাহ করতেন।
‘অতঃপর তিনি এক অঞ্জলি পানি নিতেন এবং মাথা ও দুই কান মাসাহ করতেন।
(১৭) মাথা ও কান মাসাহ করার জন্য নতুন পানি না নেওয়া :
অনেকে দুই হাত ধৌত করার পর সরাসরি মাথা মাসাহ করে, নতুন
পানি নেয় না। যেমন আশরাফ আলী থানবী (রহঃ) বলেছেন, কান ও
মাথা মাছহে করার জন্য নতুন পানি নেয়ার প্রয়োজন নেই, ভেজা হাত
দ্বারাই মাছহে করবে।
এটি সুন্নাতের বরখেলাফ। কারণ রাসূল (সা.) দুই হাত ধৌত করার পর নতুন পানি নিয়ে মাথা ও কান মাসাহ করতেন।‘হাতের অতিরিক্ত পানি ছাড়াই তিনি নতুন পানি দ্বারা তাঁর মাথা মাসাহ করতেন।
(১৮) মাথার এক-চতুর্থাংশ মাসাহ করা :
মাথা মাসাহ করার ব্যাপারে অবহেলা ও উদাসীনতা লক্ষ্য করা যায়। কেউ
চুল স্পর্শ করাকেই মাসাহ মনে করেন, কেউ মাথার চার ভাগের একভাগ
মাসাহ করেন এবং কুরআনের আয়াতের ব্যাখ্যায় নেমে পড়েন।
কুদূরী ও হেদায়ার লেখক
চার ভাগের এক ভাগ মাসাহ করার কথা উলেশ্লখ করেছেন। আর দলীল হিসাবে পেশ করেছেন ছহীহ
মুসলিমের হাদীছ।
অথচ উক্ত হাদীছে পাগড়ী থাকা অবস্থায় মাসাহ করা সম্পর্কে আলোচনা
করা হয়েছে। উল্লেখ, কুদূরী এবং হেদায়াতে মুগীরা (রাঃ)-এর নামে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে, তা ভুল হয়েছে। যা হেদায়ার টীকাতেও ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
তারা
দুইটি হাদীছকে একত্রে মিশ্রিত করে উলেখ করেছেন। সুধী পাঠক! শরী'আতের
ব্যাখ্যা হিসাবে রাসূল (সা.) সুন্দরভাবে মাথা মাসাহ করার পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন।
কারণ পবিত্র কুরআন তাঁর উপরই নাযিল হয়েছে। আর তিনি মাথার সামনের দিক থেকে শুরু
করে পিছনে চুলের শেষ পর্যড় দুই হাত নিয়ে যেতেন এবং সেখান থেকে সামনে নিয়ে এসে
শেষ করতেন। এভাবে তিনি পুরো মাথা মাসাহ করতেন।
‘অতঃপর তিনি তাঁর দুই হাত দ্বারা মাথা মাসাহ করেন। এতে দুই হাত তিনি সামনে করেন এবং পিছনে নেন। তিনি মাথার অগ্রভাগ থেকে শুরু করে ঘাড় পর্যড় নিয়ে যেতেন অতঃপর যে স্থান থেকে শুরু করেছিলেন সেখানে আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসেন।
ইমাম ইবনুল কাইয়িম (৬৯১-৭৪১ হিঃ) বলেন, “ ও রাসূল (সা.)কখনো মাথার কিছু অংশ মাসাহ করেছেন মর্মে কোন একটি হাদীছ থেকেও প্রমাণিত হয়নি।
উলেখ্য, পাগড়ী পরা অবস্থায় থাকলে মাথার অগ্রভাগ মাসাহ করা যাবে। আরো উল্লেখ্য যে, পাগড়ীর নীচে মাসাহ করতেন বলে আবুদাউদে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তা যঈফ।
১২৫. তিরমিযী হা/৩৭, ১/১৬ পৃঃ; ইবনু মাজাহ হা/৪৪৩ ও ৪৪৪, পৃঃ ৩৫, সনদ ছহীহ;| সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩৬; ইরওয়াউল গালীল হা/৮৪।
১২৬. ছহীহ আবুদাউদ হা/১৩৭; বায়হাক্বী, আস-সুনানুল কুবরা হা/২৫৬; নাসাঈ, আস সুনানুল কুবরা হা/১৬১, সনদ ছহীহ।
১২৭. পূর্ণাঙ্গ নামায শিক্ষা, পৃঃ ৪২।
১২৮. ছহীহ মুসলিম হা/৫৮২, ১/১২৩ পৃঃ, ‘নবী (ছাঃ)-এর ওযু’ অনুচ্ছেদ।
১২৯. দ্রঃ ছহীহ মুসলিম হা/৬৪৭, ১/১৩৩ পৃঃ ও হা/৬৫৬, ১/১৩৪ পৃঃ।।
১৩০. আবুল হাসান বিন আহমাদ বিন জাফর আল-বাগদাদী আল-কুদূরী, মুখতাছারল
পাঠকের সুবিধাথে অল্প কিছু লেখা দিয়েছি। তাতে আপনাদের পড়তে সুবিধা হবে।
চলবে...........
Post a Comment