বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
পবিত্রতা (ওযূ ও তায়াম্মুম)
(১৯) ওযূতে ঘাড় মাসাহ করা :
ওযুতে
ঘাড় মাসাহ করার পক্ষে ছহীহ কোন প্রমাণ নেই। এর পক্ষে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে, সবই জাল ও মিথ্যা।
অথচ কিছু আলেম এর পক্ষে মুসলিম জনতাকে উৎসাহিত করেছেন। আশরাফ আলী থানবী ঘাড় মাসাহ করার দাবী করেছেন এবং এ সময় পৃথক দুআ পড়ার কথা উল্লেখ করেছেন।
ড. শাইখ মুহাম্মদ
ইলিয়াস ফয়সাল (মদীনা মুনাওয়ারাহ) প্রণীত ও মারকাযুদদাওয়াহ আল-ইসলামিইয়াহ, ঢাকার শিক্ষক মাওলানা
মুহাম্মাদ যাকারিয়া আবদুল্লাহ অনুদিত ‘নবীজীর নামায বইয়ে
ওযুর সুন্নাত আলোচনা করতে গিয়ে গর্দান মাসাহ করার কথা বলেছেন।
এর পক্ষে জাল হাদীছও পেশ করেছেন।
১৩১. ছহীহ বুখারী হা/১৮৫, ১/৩১ পৃঃ; বুখারী (ইফাবা হা/১৮৫); মুত্তাফাক্ব আলাইহ,
মিশকাত হা/৩৯৪, পৃঃ ৪৫; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৩৬২, ২/৭৮ পৃঃ; ছহীহ তিরমিযী হা/৩৪।
১৩২. ইবনুল ক্বাইয়িম, যাদুল মা'আদ ১/১৮৫ পৃঃ, ‘মাসাহ করার বর্ণনা।
১৩৩. ছহীহ মুসলিম হা/৬৫৬, ৫৭, ৫৯, ১/১৩৪ পৃঃ, (ইফাবা হা/৫২৪ ও ৫২৫);
| মিশকাত হা/৩৯৯, পৃঃ ৪৬; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৩৬৭, ২/৮১ পৃঃ; ইবনুল
কৃাইয়িম, যাদুল মা'আদ ১/১৮৫ পৃঃ, ‘মাসাহ করার বর্ণনা।
১৩৪. যঈফ আবুদাউদ হা/১৪৭, ১/১৯-২০ পৃঃ; যঈফ ইবনে মাজাহ হা/৫৬৪।
১৩৫. পূর্ণাঙ্গ নামায শিক্ষা, পৃঃ ৪২ ও ৪৪।
১৩৬, ঐ, (ঢাকা : মুমতায় লাইব্রেরী, ১১, বাংলাবাজার, দ্বিতীয় সংস্করণ, জানুয়ারী
২০১০), পৃঃ ১১৪-১১৫। ১৩৭. ত্বাবারাণী কাবীর হা/১৭৫৮৪, ২২/৫০।
এভাবেই
ভিত্তিহীন আমলটি সমাজে বিস্তার লাভ করেছে।
জাল দলীলগুলো নিম্নরূপ :
(ক) ওয়ায়েল বিন হুজর (রাঃ) রাসূল (সা.)-এর ওযূর পদ্ধতি সম্পর্কে বর্ণনা করেন। অতঃপর তিনি তিনবার তার মাথা মাসাহ করেন এবং দুই কানের পিঠ মাসাহ করেন ও ঘাড় মাসাহ করেন, দাড়ির পার্শ্ব মাসাহ করেন মাথার অতিরিক্ত পানি দিয়ে।
তাহক্বীকৃ :
বর্ণনাটি জাল। ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, এটা জাল। নবী (সা.)-এর বক্তব্য নয়।
(খ) আমর ইবনু কা'ব বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে ওযু করার সময় আমি দাড়ির পার্শ্ব এবং ঘাড় মাসাহ করতে দেখেছি।
তাহক্বীকৃ :
বর্ণনাটি জাল। ইবনুল কৃান বলেন, এর সনদ অপরিচিত। মুছাররফসহ তার পিতা ও দাদা সবাই অপরিচিত।.
(গ) ত্বালহা ইবনু মুছাররফ তার পিতার সূত্রে তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে, আমি রাসূল (সা.)-কে দেখেছি তিনি একবার তার মাথা মাসাহ করতেন এমনকি তিনি মাথার পশ্চাদ্ভাগ পর্যড় পৌছাতেন। আর তা হল ঘাড়ের অগ্রভাগ।
তাহক্বীকৃ :
হাদীছটি
মুনকার বা অস্বীকৃত। মুসাদ্দাদ বলেন, তিনি মাথার সামনের দিক থেকে পিছনের দিক পর্যনড়
মাসাহ করেন এমনকি তার দুই হাত কানের নিচ দিয়ে বের করে নেন এই কথা ইয়াহইয়ার কাছে
বর্ণনা করলে তিনি একে অস্বীকৃতি জানান।
ইমাম আবুদাউদ বলেন, আমি ইমাম আহমাদকে বলতে শুনেছি, ইবনু উ‘আইনাহ বলতেন, মুহাদ্দিছগণ ধারণা করতেন এটা ছহীহ হাদীছের বিরোধী। তিনি এটাও বলতেন, ত্বালহা তার পিতার সূত্রে তার দাদা থেকে এ কথা কোথায় পেল?
১৩৮. সিলসিলা যঈফাহ হা/৬৯ ও ৭৪৪।
১৩৯. আল-মাজমূ' শারহুল মুহাযযাব ১/৪৬৫ পৃঃ। |
১৪০. ত্বাবারাণী কাবীর ১৯/১৮১।
১৪১. লিসানুল মীযান ৬/৪২ পৃঃ; তানকীহ, পৃঃ ৮৩।
১৪২. আবুদাউদ হা/১৩২, ১/১৭-১৮ পৃঃ। ।
১৪৩. -যঈফ আবুদাউদ হা/১৩২-এর আলােচনা দ্রঃ।
১৪৪. সিলসিলা যঈফাহ হা/৬৯, ১/১৬৮ পৃঃ।
১৪৫. হাফেয জালালুদ্দীন আস-সুয়ূত্বী, আল-লাআলিল মাছআহ ফিল আহাদীছিল
মাওযূ'আহ, পৃঃ ২০৩, দ্রঃ সিলসিলা যঈফাহ ১/১৬৮ পৃঃ ।
১৪৬. আবু নুআইম, তারীখুল আছবাহান ২/১১৫ পৃঃ।।
(ঘ) ঘাড় মাসাহ করলে বেড়ী থেকে নিরাপদ থাকবে।
তাহক্বীকৃ :
বর্ণনাটি জাল। ইমাম সুয়ূত্নী জাল হাদীছের গ্রন্থে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন।
(ঙ) “যে ব্যক্তি ওযু করবে এবং ঘাড় মাসাহ করবে, তাকে কিয়ামতের দিন বেড়ী দ্বারা বাঁধা হবে না'।
তাহক্বীকৃ
:
বর্ণনাটি জাল বা মিথ্যা।আলণ্টামা মােলণ্ডা আলী ক্বারী হানাফী উক্ত বর্ণনাকে জাল
বলেছেন। উক্ত বর্ণনায় মুহাম্মাদ ইবনু আমল আল-আনছারী ও মুহাম্মাদ ইবনু আহমাদ ইবনে মুহাররম নামের দু’জন রাবী ত্রুটিপূর্ণ।
মুহাদ্দিছগণ তাদেরকে দুর্বল বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন। উল্লেখ যে, ঘাড় মাসাহ করা সম্পর্কে এ ধরনের মিথ্যা বর্ণনা আরো আছে। এর দ্বারা প্রতারিত হওয়া যাবে না। বরং ঘাড় মাসাহ করার অভ্যাস ছেড়ে দিতে হবে।
পাঠকের সুবিধাথে অল্প কিছু লেখা দিয়েছি। তাতে আপনাদের পড়তে সুবিধা হবে।
চলবে...........
Post a Comment