বিসমিল্লাহির রহমানির
রহিম
সালাতের সময়
আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদেরকে নির্দিষ্ট সময়ে সালাত আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। রাসূল
(সা.) এবং ছাহাবায়ে কেরাম সর্বদা নির্দিষ্ট সময়ে সালাত আদায় করতেন।
কিন্তু মুসলিম উম্মাহ একই সালাত বিভিন্ন সময়ে আদায় করে থাকে। একই স্থানে একই
সালাতের আযান পৃথক পৃথক সময়ে হয়।
কখনো এক ঘণ্টা আবার কখনো আধা ঘণ্টা আগে-পরে। কোন স্থানে একাধিক মসজিদ
থাকলেও আযান ও জামা‘আত এক সঙ্গে হয় না; বরং ভিন্ন ভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত হয়।
এভাবে মানুষও দলে দলে বিভক্ত হয়েছে। রাসূল (সা.) জামা‘আতে সালাত আদায় করার
যে গুরুত্বারোপ করেছেন, তা একেবারে ভঙ্গ হয়ে গেছে।
এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে যঈফ ও জাল হাদীছ এবং কুরআন-সুন্নাহর ভুল অর্থ
ও অপব্যাখ্যা।
উল্লেখ্য যে, অনেক মসজিদে ওয়াক্ত হওয়ার পূর্বেই আযান দেয়া হয়। এটা অতিরিক্ত
পরহেযগারিতা ও বাড়াবাড়ি।
উক্ত অভ্যাস বর্জন করতে হবে।
(১) ফজর সালাতের ওয়াক্ত :
ছুবহে ছাদিকের পর হতে ফজরের সালাতের ওয়াক্ত শুরু হয়।সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত থাকে।
সমস্যাজনিত কারণে সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত আদায় করা যায়।
আউয়াল ওয়াক্তে সালাত আদায় করা সর্বোত্তম হিসাবে রাসূল (সা.) খুব ভোরে ফজরের
সালাত আদায় করতেন।
পূর্ব আকাশ ফর্সা হওয়ার পর ফজরের সালাত শুরু করতে হবে মর্মে কোন ছহীহ দলীল
নেই। মূলতঃ ছহীহ হাদীছের মনগড়া অর্থ ও অপব্যাখ্যা করে দেরী করে সালাত আদায়
করা হয়।
অনেক মসজিদে ফর্সা হলে সালাত শুরু করা হয় এবং বিদ্যুৎ বা আলো বন্ধ করে কৃত্রিম
অন্ধকার তৈরি করে সালাত আদায় করা হয়।এটা শরী‘আতের সাথে প্রতারণা করার
শামিল।
নিম্নের জাল বর্ণনাটি লক্ষণীয়-
মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) বলেন, রাসূল (সা.) আমাকে ইয়ামানে পাঠালেন। তিনি বলে
দিলেন, হে মু‘আয!
যখন শীতকাল আসবে তখন ফজর সালাত অন্ধকারে পড়বে এবং মানুষের সাধ্যের দিকে
লক্ষ্য রেখে ক্বিরাআত লম্বা করবে।
তাদের উপর কঠিন করো না। আর যখন গ্রীষ্মকাল আসবে, তখন ফজরের সালাত ফর্সা
করবে। তখনকার রাত যেহেতু ছোট, আর মানুষ যেহেতু ঘুমায় সেহেতু তাদেরকে অবকাশ
দিবে, যেন তারা সালাত পায়।
তাহক্বীক্ব :
বর্ণনাটি জাল। এর সনদে মিনহাল ইবনুল জার্রাহ নামক একজন মিথ্যুক রাবী আছে। ইমাম
বুখারী ও মুসলিম বলেছেন, সে অস্বীকৃত রাবী।
ইবনু হিববান বলেছেন, সে মিথ্যা হাদীছ বর্ণনা করত এবং মদ পান করত।অতএব উক্ত
হাদীছের আলোকে ফজরের সালাত দেরী করে পড়ার কোন সুযোগ নেই।
যেহেতু বর্ণনাটি জাল।
ফজরের মাধ্যমে ফর্সা কর।
কারণ নেকীর জন্য উহা সর্বাধিক উত্তম।উল্লেখ্য যে, উক্ত মর্মে কিছু যঈফ হাদীছও আছে।
অন্য হাদীছে এসেছে, রাসূল (সা.) বেলাল (রাঃ)-কে নির্দেশ দেন,
‘তুমি ফজর সালাতের মাধ্যমে ফর্সা কর। যতক্ষণে লোকেরা তাদের তীর নিক্ষেপের
স্থানগুলো দেখতে পায়’।
উক্ত হাদীছ সম্পর্কে শায়খ নাছিরুদ্দ্বীন আলবানী বলেন,‘ইনশাআল্লাহ এই হাদীছের সনদ
ছহীহ’
উক্ত হাদীছের ভুল ব্যাখ্যা করে বলা হয় যে, ফর্সা হওয়ার পর ফজরের সালাত শুরু
করতে হবে।
কারণ এটাই সর্বোত্তম। ‘হেদায়া’ কিতাবে প্রথম আলোচনায় সঠিক সময় উল্লেখ করা হয়েছে।
কিন্তু পরে পৃথক আলোচনায় বলা
হয়েছে,
ফর্সা করে ফজর সালাত আদায় করা মুস্তাহাব’।অথচ উক্ত ব্যাখ্যা চরম বিভ্রান্তিকর এবং
ছহীহ হাদীছের প্রকাশ্য বিরোধী। কারণ-
(ক) ইমাম তিরমিযী (২০৯-২৭৯
হিঃ) উক্ত হাদীছ বর্ণনা করে বলেন,
‘ইমাম শাফেঈ, আহমাদ ও ইসহাক্ব বলেন, ‘ইসফার’ হল, ফজর প্রকাশিত হওয়া, যাতে কোন
সন্দেহ না থাকে। তারা কেউ বর্ণনা করেননি যে, ইসফার অর্থ সালাত দেরী করে পড়া।
(খ) ইমাম ত্বাহাবী (২৩৯-৩২১
হিঃ) বলেন,
‘(উক্ত হাদীছের অর্থ হল) অন্ধকারে ফজরের সালাত শুরু করা এবং ফর্সা হলে শেষ করা,
যা আমরা রাসূল (সা.) ও তাঁর ছাহাবীগণ থেকে বর্ণনা করেছি।
আর সেটাই আবু হানীফা, আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (রহঃ)-এর কথা’। তিনি আরো বলেন,
তোমরা ফজরের মাধ্যমে ফর্সা কর’ অর্থাৎ ফজরের সালাতে ক্বিরাআত লম্বা কর।
এর অর্থ এটা নয় যে, তারা যেন ফর্সা হওয়ার সময় সালাতে প্রবেশ করে। বরং ফর্সা
হওয়ার সময় তারা সালাত থেকে বের হবে’।
(গ) আলবানী বলেন,
‘হাদীছের শব্দ সমূহ একত্রিত করলে প্রমাণিত হয় যে, এর অর্থ হবে- ফর্সা হওয়া পর্যন্ত
সালাতের ক্বিরাআত লম্বা করা।
আর এভাবে ফর্সা করাই সর্বোত্তম এবং নেকীর দিক থেকে সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ। যেমনটি
পূর্বের শব্দগুলো থেকে প্রমাণিত হয়েছে।
অতএব ‘ইসফার’ অর্থ এটা নয় যে, ফর্সা করে সালাত শুরু করতে হবে, যেমনটি হানাফীদের
মাঝে প্রচলিত আছে’।
অতএব ছহীহ হাদীছের অপব্যাখ্যা করে দেরীতে ফজর সালাত আদায় করা মহা অন্যায়।
ইমাম ত্বাহাবী (রহঃ)-এর বক্তব্য অনুযায়ী ইমাম আবু হানীফা, আবু ইউসুফ এবং মুহাম্মাদ
(রহঃ)ও সঠিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
দলীয় কারণে কুরআন-হাদীছের অর্থ বিকৃতি করা আরো বড় অপরাধ। তাছাড়া ছহীহ
হাদীছে এসেছে, রাসূল (সা.)ফজর সালাতে ৬০-১০০ আয়াত পাঠ করতেন।
যদি ফর্সা হওয়ার পর সালাত শুরু করা হয়, আর ৬০ থেকে ১০০ টি আয়াত পাঠ করা
হয়, তবে সূর্য উঠতে কতক্ষণ বাকী থাকবে?
পাঠকের সুবিধাথে অল্প কিছু লেখা দিয়েছি। তাতে আপনাদের পড়তে সুবিধা হবে।
চলবে...........
إرسال تعليق